দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুলাই: এ যেন সাক্ষাৎ কোনো হিন্দি সিনেমা! যেখানে দেখানো হয়, কিভাবে মৃত রোগীকেও ‘জীবিত’ দেখিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালের তরফে। ঠিক যে কারণেই, একদিকে যেমন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ মানুষের কাছে ‘ভগবান’ হয়ে থাকেন, অন্য একটি অংশ “কসাই” হয়ে থাকেন। জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরেও দেখা মিললো তেমনই এক বেসরকারি হাসপাতাল ও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষের। অভিযোগের আঙুল, মেদিনীপুর শহরের নানুরচক স্থিত বেসরকারি হাসপাতাল (নির্ণয়) এর দিকে। যেখানে মৃত রোগীর চিকিৎসা করা, এমনকি “বিভিন্ন টেস্ট” এর জন্য টাকা জমা করতে বলার অভিযোগ উঠেছে! শুধু তাই নয়, তিনদিনে একটি সাধারণ রোগীর চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ বাবদ ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বিল করার অভিযোগ উঠেছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মূলত সুগার ফল করে যাওয়া সহ বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা নিয়ে চলতি সপ্তাহের বুধবার সংকটজনক অবস্থায় মেদিনীপুর শহরের নির্ণয় নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় চন্দ্রকোনা রোডের সাতবাঁকুড়া এলাকার বাসিন্দা বীনা দে-কে। অভিযোগ, প্রথমেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগীকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। উল্টে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে এ ধরনের চিকিৎসা হয় না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় রোগীর পরিবারের সদস্যদের। এরপর বাধ্য হয়েই মরণাপন্ন রোগীকে নগদ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা করানোর শর্তে ভর্তি নেওয়া হয় নার্সিংহোমে। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, বুধবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিল ধরানো হয় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা! এদিকে, আইসিইউতে ভর্তি থাকা বীণা দেবীকে দেখতে দেওয়া হয়নি কেমন আছেন। শনিবার সকালে শুধু বলা হয়, “অবস্থা ভালো নয়, আপনারা এখানের বিল মিটিয়ে দিন। তারপর অন্য কোথাও নিয়ে যান, নাহলে রোগীর আরও একাধিক টেস্ট করাতে হবে।” ততক্ষণে পরিবারের তরফে ২০,০০০ টাকা জমা করা হয়। এরপর, বিকেল ৪ টা ৪৬ মিনিটে রোগী মারা গেছেন বলে জানানো হয়। যদিও পরিবারের বক্তব্য, শনিবার সকালে কিংবা শুক্রবার রাতেই রোগী মারা গিয়েছিলেন! তবে মৃত্যুর কথা পরিবারের কোনো সদস্যকে না জানিয়ে বিভিন্ন টেস্টের নামে টাকা চাইতে থাকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। অবশেষে বিকেল ৪ টা ৪৬ মিনিট নাগাদ রোগীর পরিজনেরা চেপে ধরলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় রোগীর মৃত্যুর খবর। ক্যামেরার সামনে মুখ না খুললেও, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর পরিবারের সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন।

thebengalpost.in
মৃতা রোগীকে নিয়ে ব্যবসার অভিযোগ :

গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর শহরের এই বেসরকারি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে উঠেছে একাধিক অভিযোগ! কয়েকদিন আগেই (৩ রা জুলাই) মেদিনীপুর শহরের ৯ নং ওয়ার্ডের এক রোগীকে (রথীন চক্রবর্তী) বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলা হয় বলে তাঁর স্ত্রী অলিভিয়া চক্রবর্তী এখনও সমাজ মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়ে চলেছেন। সেবারও মাত্র কয়েক ঘন্টায় দেড় লক্ষ টাকা বিল করার অভিযোগ উঠেছিল। এবারও, মৃতার ছেলে সনৎ দে ও মেয়ে রীনা দাস একই অভিযোগ জানালেন। কাতর ভাবে বললেন, “এরকম অভিজ্ঞতা যেন আর কারুর না হয়! প্রশাসন দেখুন।” তার সাথে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না নেওয়ার একাধিক অভিযোগ। তবে, এত সবের পরও কোনও হেলদোল দেখা যায়নি প্রশাসনিক মহলে! বারবার মেদিনীপুর শহরের এই নামজাদা বেসরকার হাসপাতালের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠলেও এখনও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে, প্রশ্ন তুলছেন শহরের সচেতন নাগরিকরা! এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

thebengalpost.in
শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ :