দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, ৭ মে: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিকে সামনে রেখে শনিবার মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সভায় সাম্প্রতিক কুড়মি আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তথা বিধায়ক অজিত মাইতি ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে বসেন! ‘সচেতন’ কিংবা ‘আবেগতাড়িত’ হয়ে অজিত বলেন, “কুড়মিদের নিয়ে একটা অত্যন্ত নোংরা খেলা চলছে…কিছু স্ব-ঘোষিত কুড়মি নেতা স্বঘোষিত খালিস্তানিদের মতো…আমি জানিনা বিজেপি-সিপিএম তাদের উস্কানি দিয়ে দিল্লিতে কোন আন্দোলন করতে দিচ্ছে না। যা করার এই বাংলাকে অশান্ত করার চক্রান্ত চলছে।” তাঁর এই মন্তব্যের পরই সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি। ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন আপামর কুড়মি সম্প্রদায়ের লোকজন। লালগড় থেকে শালবনী, খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রাম সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় উঠতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জঙ্গলমহলের একাধিক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে ফোন করে, অজিত মাইতি’র ওই বক্তব্যের ক্লিপিং চাইতে শুরু করেন। আর, তৃণমূলের ওই সভায় থাকা কিছু কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত নেতা আবার শীর্ষ নেতৃত্বকে ফোন করে অজিত মাইতির বক্তব্যের বিরোধিতা করা শুরু করেন।

thebengalpost.net
কুশপুত্তলিকা দাহ :

এরপরই, রবিবার সাতসকালে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, “অজিত মাইতির মন্তব্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে, দলের কোন সম্পর্ক নেই।” দলের অবস্থান ‘স্পষ্ট’ করে তিনি এও জানান, “তৃণমূল কংগ্রেস কোনো সম্প্রদায়কেই অপমান করতে চায় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের জন্যই কাজ করে চলেছেন।” যদিও, এর মধ্যেই রবিবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের লালগড় সংলগ্ন কুরকুটশোল এলাকায় অজিত মাইতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেন কুড়মিরা! এরপর, রবিবার সন্ধ্যায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরাও জানান, “জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর ও বিধায়কের এই মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর এই মন্তব্যকে দল সমর্থন করে না। তৃণমূল দল মানবতাবাদে বিশ্বাসী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়মিদের অনেক দাবি মিটিয়েছেন। গতবছর একটা রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে। ওঁরা (কুড়মিরা) যে জাস্টিফিকেশন (Justification) এর কথা বলছেন, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে, এর মধ্যে এই মন্তব্য (অজিত মাইতি’র মন্তব্য) কোন সমস্যার সমাধান করবেনা বলেই আমরা মনে করি।” তিনি এও জানান, “উনি তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা। আশা করি উনি এই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন। আমি নিজেও ওঁর সাথে কথা বলব।” তবে, রাত্রি দশটা পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি অজিত মাইতির তরফে। যদিও, দাসপুরের একটি সভায় তিনি জানিয়েছেন, “তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।” তবে, সেই সভাতেও ‘কুড়মিদের দেওয়ালে রাজনৈতিক প্রচার বন্ধ’ কর্মসূচির তীব্র বিরোধিতা করেন অজিত!