দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট: মধ্যরাতের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর লোকাল থানার ১ পুলিশ আধিকারিক (ASI) সহ খড়্গপুর শহরের আরও দুই যুবক। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও ১ জন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় আহত আরও ২ জন চিকিৎসাধীন মেদনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে (ঘড়ির কাঁটার হিসেবে শনিবার রাত্রি ১টা নাগাদ) খড়্গপুর গ্রামীণের বেনাপুর রেলগেটের কাছে তীব্র গতিতে ছুটে আসা বিলাসবহুল একটি অডি (Audi) গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় খড়্গপুর লোকাল থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর (ASI) রামানন্দ দে (৪৬)-র। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার তালডাংরায়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ওই অডি গাড়ির চালক অভিষেক শ্রীবাস্তব এবং গাড়ির অন্যতম এক সওয়ারি শেখ জাহাঙ্গীর খান। তাঁরা দু’জনই খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই গাড়িতে থাকা অপর ৩ আরোহী, যথাক্রমে- সুজিত রায়, প্রদীপ দাস এবং চাঁদ কুমার দাসও গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে, সুজিত-কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওড়িশার কটক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন মেদনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সকলেই খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ঘটনা ঘিরে জেলা জুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া! ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে পুলিশের তরফে।

thebengalpost.net
মধ্যরাতের দুর্ঘটনাস্থল :

জানা গেছে, পেশায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী, বছর ৩৫-র জাহাঙ্গীর খড়্গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা। অপরদিককে, ইন্দার অভিষেক শ্রীবাস্তব ফুলের কাজ করতেন। ইন্দার সুজিত রায়, ঝাপেটাপুরের প্রদীপ দাস ও পুরাতন বাজারের চাঁদ কুমার দাস-ও তাঁদের সঙ্গে এই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ব্যবসার কাজেই তাঁরা ৫ জন নারায়ণগড়ে গিয়েছিলেন। জানা যায়, অভিষেক তাঁর বন্ধু তথা কৌশল্যার ব্যবসায়ী চন্দন দে-র কাছ থেকে তাঁর (চন্দনের) অডি গাড়িটি নিয়ে গিয়েছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন অভিষেক-ই। নারায়ণগড়ে কাজ সেরে ফেরার পথে মকরামপুরের কাছে একটি হোটেলে (ধাবায়) তাঁরা রাতের খাবারও খেয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরপরই, তীব্র গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে তাঁরা খড়্গপুরে ফিরছিলেন। ফেরার পথেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত্রি ১টা নাগাদ বেনাপুর রেলগেটের কাছে টহলরত পুলিশের ভ্যান থেকে নেমে দিঘা-ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোডে দাঁড়িয়ে ছিলেন কর্তব্যরত ASI রামানন্দ দে৷ গাড়িতে ছিলেন অন্যান্য পুলিশকর্মীরাও। সেই সময়ই খড়্গপুর অভিমুখে তীব্র গতিতে ছুটে আসা অডি গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই পুলিশ আধিকারিককে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়েন রামানন্দ! এর পরই, গাড়িটি রেলগেটের সিগন্যাল পোস্টে ধাক্কা মেরে বাঁ-দিকে থাকা একটি ঝুপড়ি চা-দোকানে ঢুকে যায়। ভয়ঙ্কর এই দুর্ঘটনার সাক্ষী পুলিশকর্মীরা দ্রুত ছুটে এসে রামানন্দকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এর পর, দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে জখমদের বের করতে চলে উদ্ধারকাজ। ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় একে-একে গাড়ি থেকে পাঁচজনকে উদ্ধার করে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই রামানন্দ ও জাহাঙ্গীরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাকিদের স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় গাড়ির চালক অভিষেক শ্রীবাস্তবের। সুজিতকে স্থানান্তরিত করা হয় কটকে। বাকিরা চিকিৎসাধীন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে। চালকের পাশে বসে থাকা চাঁদ কুমারের হাত ভেঙেছে বলে জানা গেছে। চালকের ঠিক পিছনের সিটেই বসে ছিলেন জাহাঙ্গীর। সুজিত বসেছিলেন চাঁদ কুমারের পিছনের সিটে। তাঁদের দু’জনের মাঝখানে বসেছিলেন প্রদীপ। এদিকে, মধ্যরাতের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র ৪৬ বছরের ওই পুলিশ আধিকারিক এবং খড়্গপুর শহরের দুই তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে শোকর ছায়া নেমে এসেছে রেল শহরে! ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে পুলিশের তরফে।

thebengalpost.net
মৃত পুলিশ আধিকারিক: