দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ৩০ এপ্রিল: সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থানে দু’জন, পঞ্চম স্থানে একজন। বুধবার প্রকাশিত ICSE-তে নজরকাড়া সাফল্য মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের। স্কুলের প্রিন্সিপাল চন্দা মজুমদার জানিয়েছেন, ৫০০-র মধ্যে ৪৯৯ নম্বর পেয়ে ICSE-র সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে আদৃতা মাহাত এবং সৃজিতা মণ্ডল। ৪৯৬ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে প্রবাহনীল দাস। অন্যদিকে, মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা তাদের এই সাফল্যের জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই সর্বাধিক কৃতিত্ব দিয়েছে। আর প্রিন্সিপাল বলেন, “ওরা সবকিছুতেই পারদর্শী। স্কুলের যেকোন অনুষ্ঠানেই ওরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। গত বছর আমাদের স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী (গোল্ডেন জুবিলী) অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু অনুষ্ঠান বা এক্টিভিটি লেগেই থাকতো। ওরা সবেতেই অংশ নিয়েছে। তার সাথে সাথে নিজেদের পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছে।” বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের সার্বিক ফলাফল নিয়েও উচ্ছ্বসিত তিনি। ICSE (দশম)-তে ৪ জন ছাত্রছাত্রী (আদৃতা, সৃজিতা, প্রবাহনীল এবং আদিত্য মণ্ডল) ৯৯ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ৯৭ শতাংশ থেকে ৯৮.৯ শতাংশের মধ্যে পেয়েছে ২২ জন। ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে মোট ৮৮ জন ছাত্রছাত্রী। ISC (দ্বাদশ)-তে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে ৩৬ জন পড়ুয়া। সর্বোচ্চ ৯৮.৫ শতাংশ নম্বর (হিউম্যানিটিস/কলা বিভাগ) পেয়েছে ঋদ্ধি চক্রবর্তী। বিজ্ঞান শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর (৯৮.২৫ শতাংশ) পেয়েছে অন্বেষা মন্ডল।

thebengalpost.net
আদৃতা, সৃজিতা ও প্রবাহনীলের সঙ্গে প্রবাহনীল:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

মেদিনীপুর শহরের বার্জটাউনের একটি আবাসনে থাকে আদৃতা। ভালোবাসে ছবি আঁকতে। আদৃতা’র আঁকা একের পর এক ছবি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতে হয়। আদৃতা বড় হয়ে গবেষণা করতে চায় বলে জানিয়েছে। সে জানায়, “ভালো রেজাল্ট হবে আশা করেছিলাম, তবে এতোটাও আশা করিনি!” পড়াশোনা আর ছবি আঁকার বাইরে আদৃতা ভালোবাসে ঘুমোতে আর সায়েন্স ফিকশন সিনেমা দেখতে। শহরের বিধাননগর এলাকার বাসিন্দা সৃজিতাও চায় গবেষণা করতে। ভালোবাসে নাচ, গান আর ব্যাডমিন্টন। সৃজিতা-র বাবা-মা দু’জনই হাইস্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। সৃজিতা বলে, “ঠিক বাঁধাধরা নিয়ম মেনে পড়িনি। যখন পড়তে ইচ্ছে করত, তখনই পড়েছি। তবে সেটা সারাবছর ধারাবাহিকভাবে। পরীক্ষাও খুব ভাল হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাবা-মা এবং গৃহশিক্ষকদের অবদান ভোলার নয়।”

thebengalpost.net
মেধাতালিকায় স্থান অর্জনকারী তিন পড়ুয়া:

সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানাধিকারী প্রবাহনীল-কে নিয়ে উচ্ছ্বসিত স্কুলের প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁরা বলেন, “শুধু পড়াশোনা নয়, প্রবাহনীল সবেতেই চ্যাম্পিয়ন। মঞ্চ সঞ্চালনা থেকে মাউথ অর্গান, সিন্থেসাইজার বাজানো- সবেতেই পারদর্শী ও।” প্রবাহনীল বলে, “আমার কোন গৃহশিক্ষক ছিল না। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্যেই এই সাফল্য। যেভাবে স্যার-ম্যাডামরা বলেছেন, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আর তাতেই এই সাফল্য।” প্রবাহনীল এও বলে, “স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেজন্য আমি গর্বিত। তবে, সব কিছুর সামলেও কিভাবে রেজাল্ট ভালো করা যায়, সেটাও স্যার-ম্যাডামরাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও অসুবিধা হতে দেননি।” কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় প্রবাহনীল। বাবা পার্থসারথী দাস বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী। মা মৌসুমী চ্যাটার্জি কেশপুর গার্লস হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “ও ভালবেসে পড়াশোনা করত। আমরা কখনও চাপ দিইনি। কোন অসুবিধে হলে আমাদের বলতে অথবা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ওর কোনও গৃহশিক্ষক ছিলনা। স্কুলের অবদান সত্যিই ভোলার নয়।”

thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা: