তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জুন: ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ (Ghatal Master Plan) রূপায়ণের আর্থিক বাজেটে ছাড়পত্র দিল কেন্দ্র সরকার। রাজ্য সরকারের ধরা মোট খরচের প্রস্তাবিত বাজেটকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। এক কথায়, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স দিল কেন্দ্র। প্রসঙ্গত, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকরী করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ১২৩৮ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছিল জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে। সেই বাজেটে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। যার ফলে, ঘাটার মাস্টার প্ল্যান এবার এফএমবিএপি বা ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বর্ডার এরিয়া প্রোজেক্টের আওতাধীন হল। এই প্রকল্পের সুবিধা মতো কেন্দ্রীয় সরকারের ষাট শতাংশ আর্থিক অনুমোদনের বিষয়টি স্বীকৃতি পেল। উল্লেখ্য যে, রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। সেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাজেই, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি এক ধাপ এগালো বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই, ঘাটাল বাসীর মধ্যে একদিকে যেমন খুশির হাওয়া, ঠিক তেমনই নানা প্রশ্ন-ও জাগছে মনে! তাহলে কি এবার সত্যিই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান এর কাজ শুরু হতে চলেছে? আবার কেউ ভাবছেন এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল! অনেকেই বলছেন, বাস্তবে কার্যকরী কতটা হবে সন্দেহ আছে! ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান আসলে সোনার পাথর বাটি!
প্রসঙ্গত, ১৯৫৭ সালের ২১ মার্চ ঘাটালের তৎকালীন সাংসদ নিকুঞ্জবিহারী চৌধুরী ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ভাবনা সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে রাখেন। তারপর, ১৯৫৯ সালে মানসিং কমিশন গঠনের পর ১৯৮২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বামফ্রন্টের সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল শিলাবতী নদীর পাড়ে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের শিলান্যাস করেন। তারপর, কয়েক শতক কেটে গিয়েছে। শিলাবতী নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। পট পরিবর্তন হয়েছে নানা রাজনৈতিক দলের। ঘাটাল বাসীর অভিযোগ, প্রতিবার ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অবশেষে, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের আর্থিক বাজেটের প্রস্তাব ছাড়পত্র পাওয়ায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের স্বপ্ন কিছুটা হলেও এগিয়েছে বলা যায়। এর আগে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক অনুমোদন মিলেছিল। এবার, আরেক ধাপ এগিয়ে ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স দিল কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে অনেকেই মনে করছেন এটি আসলে একটি ‘সোনার পাথর বাটি’। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে দুই মেদিনীপুর জেলার বন্যা প্রবণ ১৩ টি ব্লক ও ৫ টি পৌরসভা পড়ছে। আর, এই প্রকল্পের জন্য স্থায়ীভাবে জমি অধিগ্রহন করতে হবে ৩৮৩৯ হেক্টর। সেই জমি ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকারের কিনতে হবে। কবে ও কিভাবে হবে? এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মধ্যে। তাছাড়াও, ঘাটালের শিলাবতী নদী দেড়শ মিটার চওড়া করা কি বাস্তবে সম্ভব? এই প্রশ্ন-ও উঠছে! তবুও, প্রতিবছর প্লাবিত হওয়া ঘাটাল বাসী ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের স্বপ্ন দেখছেন। দুই মেদিনীপুরের ১৩ টি ব্লক ও ৫ টি পৌরসভার মানুষ প্লাবন-মুক্তির আশায় দিন গুনছেন।
এ বিষয়ে রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ডাক্তার মানস রঞ্জন ভূঁইয়া বলেন, “কয়েকদিন আগে কেন্দ্রের ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স ইউনিট ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের মঞ্জুরি দিয়েছে। এরপর, আরও দুটি পদক্ষেপ আছে। অর্থমন্ত্রকের মঞ্জুরি ও বিভাগীয় দপ্তরের মঞ্জুরি প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তর ও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে বারবার দরবার করেছেন। তারপরও, অর্থমন্ত্রক ও বিভাগীয় দপ্তরের মঞ্জুরী পেতে অনেকটাই সময় লেগে যাচ্ছে। তবে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘাটাল মাস্টার-প্ল্যানে ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছেন। তাতে তো হবেনা! আশা করব, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র সরকারের সজাগ দৃষ্টি পড়বে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্সের ইউনিটের মঞ্জুরী পেয়েছে, কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক ও বিভাগীয় দপ্তরের ছাড়পত্র পেয়ে গেলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের কাজে গতি আসবে।”