Kolkata High Court

‘খামবন্দী’ রাজ্যের ৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভবিষ্যত! দুঃশ্চিন্তা ৪ বছর শিক্ষকতা করার পরও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল টেটের বিজ্ঞপ্তি। ‘১৫ তে হয়েছিল টেট পরীক্ষা। ২০১৭ তে হয়েছিল নিয়োগ। রাজ্যজুড়ে একেবারে রেকর্ড সংখ্যক ৪২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল! প্রথম থেকেই নানা অভিযোগ ছিল নিয়োগ-কে কেন্দ্র করে। কোনও মেরিট প্যানেল বা মেধাতালিকা ছাড়াই রাতারাতি মোবাইলে এসএমএস বা ইমেইল পাঠিয়ে নিয়োগ করার অভিযোগ ছিল। টেট পাস না করেও বা টেটের পরীক্ষায় না বসেও বা সাদা খাতা জমা দিয়ে নাকি অনেকেই চাকরি পেয়েছিলেন! এরকম গুরুতর অভিযোগও ছিল। এছাড়াও, ৬ টি প্রশ্ন (বা, উত্তর) ভুলের অভিযোগ তো ছিলই। তবে, এতকাল কোনো আদালতেই সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনোভাবেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি! শুধুমাত্র অতি সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন ভুল মামলায়, মামলাকারীদের দ্রুত চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য-কে। তাছাড়া মানিক বাবু-কে ওই বিতর্কিত নিয়োগের জন্য বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। অবশেষে, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে পড়ে! স্বদেশ দাস নামে এক প্রাথমিক শিক্ষককে প্রায় ২-৩ বছর চাকরি করার পর, টেট (TET) পাস না করার অভিযোগে চাকরি থেকে বহিষ্কার করেছিল উত্তর দিনাজপুর DPSC (জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ)। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে শুনানি চলাকালীন মামলাকারী স্বদেশ দাসের আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টে এরকম আরও ১২ জনের তালিকা দিয়ে বসে! তাঁরাও নাকি টেট পাস না করেই গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে চলেছেন সম্মানজনক বেতনের সহিত! মামলার গতিবিধি শুনেই সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মামলাটিকে “জনস্বার্থ মামলা” (PIL) ‘র রূপ দিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই মামলাতেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE)- কে গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট থেকে নিয়োগ হওয়া ২০১৭ সালের প্রাথমিক শিক্ষকদের সম্পূর্ণ তালিকা আদালতে জমা করতে। গতকাল অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর সেই মামলার শুনানি-তে ৪২ হাজার শিক্ষকের সমস্ত তথ্য আদালতে জমা দেয় পর্ষদ। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২০ নভেম্বর (২০২১)! ততদিন অবধি দুঃশ্চিন্তায় ওই মেধাতালিকায় জায়গা পাওয়া এবং ৪ বছর ধরে চাকরি করা রাজ্যের ৪২ হাজার শিক্ষকই!

কলকাতা হাইকোর্ট :

২০১৭ সালে নিয়োগ হওয়া বিভিন্ন জেলার ৪২ হাজারের শিক্ষকের টেট ও অ্যাকাডেমিকের সমস্ত তথ্য বিভিন্ন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ (DPSC) থেকে সংগ্রহ করে, তা পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মীকান্ত গুপ্তা ২২ টি পৃথক পৃথক খামে ভরে আদালতে জমা দেন। খামের মুখ বন্ধ করবেন কিনা এই প্রশ্ন করায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, “আদালতে সমস্ত কিছুই খোলা, পরিষ্কার থাকা উচিৎ। খামের মুখ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই!” এরপর, মামলাকারী স্বদেশ দাসের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন, আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে এই তালিকার অসঙ্গতি খুঁজে বের করতে হবে। আদালতও সেই অসঙ্গতি খুঁজে বের করবে ওই দিনের মধ্যে। পরবর্তী শুনানিতে অর্থাৎ ২০ নভেম্বর মামলাকারী স্বদেশ দাসের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনবে আদালত। তবে, তার আগে অ্যাফিডেভিট (Affidavit) আকারেও জমা করতে অসঙ্গতির প্রতিটি বিষয়। আর, এ নিয়েই প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যোগ্যতাসম্পন্ন অর্থাৎ টেট পাস ও প্রশিক্ষিত সকল শিক্ষকরাও। তাঁরা ভয় বা দুশ্চিন্তা করছেন এই ভাবনা থেকে যে, ওই মেধাতালিকায় একাধিক অসঙ্গতি দেখা দিলে আদালত যদি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে অথবা ২০১৭ এর পুরো প্যানেলটিই বাতিল করে দেয়! তবে, তাঁদের সেই দুঃশ্চিন্তা যে অনেকটাই অমূলক তা মানছেন আইনজীবীরা। আদালতের বেশিরভাগ আইনজীবী বলছেন, ৪২ হাজারের মধ্যে যদি কয়েক হাজার অসঙ্গতিও বের হয় (বাস্তবে যদিও তা সম্ভব নয় বলেই অভিমত সংশ্লিষ্ট সকলের), তা সত্ত্বেও টেট পাস, প্রশিক্ষিত বা যোগ্য শিক্ষকদের ভয়ের কোন কারণ নেই! কারণ, আদালত তাদের চাকরির নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই দেখবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। আর, যে ১২ জন অথবা আরও বেশি শিক্ষকের টেট পাস যোগ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা যদি সত্যিই হয় তবে শুধুমাত্র তাদের চাকরিই বাতিল হতে পারে। সেক্ষেত্রেও সঠিক এবং উপযুক্ত প্রমাণের প্রয়োজন বলে আদালত আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে গতকালের শুনানিতে। অনেক আইনজীবীই মানছেন, এক্ষেত্রে হয়তো খুব কম সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী বা শিক্ষকের তথ্যে গলদ থাকতে পারে! আর, সেই দায়িত্ব পর্ষদ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের ঘাড়ে চাপিয়ে এ যাত্রায় রক্ষাও পেয়ে যেতে পারে। তবে, ৪২ হাজারের মধ্যে যদি সত্যিই বেশ কয়েক হাজার শিক্ষকের নথিতে গলদ ধরা পড়ে, তবে কি হবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু, যোগ্যদের চাকরি সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আদালতের কোন মহলই এখনও পর্যন্ত সংশয় প্রকাশ করেনি! এদিকে, ২০ নভেম্বর মামলা যখন উঠবে, তখন আর এই বেঞ্চ থাকবে না। কারণ, কলকাতা হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে প্রকাশ শ্রীবাস্তব-কে। তিনি হয়তো আগামী সপ্তাহেই দায়িত্ব নিতে চলেছেন। তিনি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের দ্বিতীয় বর্ষীয়ান বিচারপতি ছিলেন। অপরদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল-কে এলাহাবাদ হাইকোর্টের (উত্তর প্রদেশ) প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই, ওই জনস্বার্থ মামলাটি ২০ নভেম্বর স্বাভাবিকভাবেই বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দুঃশ্চিন্তায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা (প্রতীকী ছবি) :

News Desk

Recent Posts

Medinipur: খড়্গপুর টাউন থানার আইসি হচ্ছেন পার্থসারথি পাল; বদলি হলেন কেশিয়াড়ি, মোহনপুর, গোয়ালতোড় থানার IC-রাও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: রাজ্যজুড়ে ১৭৫ জন ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হলো।…

3 mins ago

Midnapore: মেয়ের অন্নপ্রাশন শেষে জ্বর নিয়েই কাজে যোগ দিয়েছিলেন, ‘কফিনবন্দী’ হয়ে ডেবরায় ফিরলেন CRPF জওয়ান

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: শোকসংবাদটা পৌঁছেছিল শুক্রবারই। বুকে পাথর চেপে অপেক্ষা…

4 days ago

Medinipur: মামিমার সাথে ‘অভিসারে’ গিয়ে ফাঁসলেন যুবক? অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে কেশিয়াড়িতে গ্রেপ্তার ‘কলির কেষ্ট’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মামিমাকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক।…

5 days ago

Medinipur: প্রায় ৬০ বছর পর রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রীর গড়ে ‘পাকা’ হবে মাটির স্কুলবাড়ি, আনন্দে মিষ্টিমুখ পড়ুয়াদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার 'খাসতালুক' সবংয়ে…

6 days ago

Kharagpur: ওড়িশার বেসরকারি কলেজে খড়্গপুরের ছাত্রের রহস্যমৃত্যু! খুনের অভিযোগ পরিবারের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ওড়িশার বেসরকারি কলেজে বাংলার ছাত্রের রহস্যমৃত্যু! খুনের…

1 week ago

Midnapore: জেলার স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী রাজীব খানের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মেদিনীপুর

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ নভেম্বর: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো মেদিনীপুর শহর…

2 weeks ago