দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ ডিসেম্বর: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পর এবার চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মেদিনীপুর শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে! শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের সুপ্রাচীন ওই বেসরকারি হাসপাতালে মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা, বছর ৫২-র এক রোগীর মৃত্যু হয়। এরপরই, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনেন পরিবারের সদস্যরা। পরিজনদের তরফে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরই শনিবার বিকেল ৪-টা নাগাদ ওই বেসরকারি হাসপাতালে (নার্সিংহোমে) আজ (১৬ ডিসেম্বর) থেকেই রোগী (নতুন রোগী) ভর্তি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।
একইসঙ্গে, ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের আগামী দু’দিনের মধ্যে (১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে) অন্যত্র (অন্য কোনো হাসপাতালে) স্থানান্তরিত করার নির্দেশও জারি করেছেন CMOH ডঃ সারেঙ্গী। আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই বেসরকারি হাসপাতাল (নার্সিংহোম) বন্ধ রাখার নির্দেশও জারি করা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে। এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডক্টর সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে শনিবার সকালে। তারপরই হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা বা উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়। পরিবারের তরফে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১)-র নেতৃত্বে দুপুরে স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি দল ওই বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে এসেছেন। তবে, এখনও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা বাকি আছে। আমরা সমস্ত রিপোর্ট-ই স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাবো। তদন্ত শেষ না হওয়া অবধি ওই বেসরকারি হাসপাতাল আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও আগামী সাত দিনের মধ্যে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সহ শো-কজের উত্তর দিতে হবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) পেটে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে মেদিনীপুর শহরের স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, বছর ৫২-র অমল গোপ শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক চিকিৎসকের পরামর্শে। রোগীর শরীরে অ্যাজমা বা হাঁপানির উপসর্গও ছিল বলে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে ওই রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পরিবার, উভয়ের তরফেই জানানো হয়েছে। তার আগে রোগীর শরীরে রাইলস টিউব লাগানো হয়েছিল। মৃত রোগীর দাদা কমল গোপ অভিযোগ করেন, “আমরা ভোর বেলা ওকে (অমল গোপ) কলকাতায় নিয়ে যাব বলে নার্সিংহোমে উপস্থিত হই। দেখি রাইলস টিউব খুলে গেছে, আর ভাই খুব কষ্ট পাচ্ছে। বারবার বলার পরেও চিকিৎসক, নার্স কেউই আসেননি এবং কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রায় এক-দেড় ঘন্টা কষ্ট পেয়ে মৃত্যু হল! এর দায় পুরোপুরি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের।” এরপরই, তাঁরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অপরদিকে, ওই বেসরকারি হাসপাতালেরই একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, “হাঁপানি সহ নানা কো-মর্বিডিটি ছিল ওনার। আমরা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে শুক্রবার রাতেই সমস্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করে দিয়েছিলাম। নিয়ম ও পরামর্শ মেনেই শুক্রবার রাতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, ভোর বেলা ওনার মৃত্যু হয়।” ইতিমধ্যে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানা গেছে। ঘটনা ঘিরে জেলা শহর মেদিনীপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।