দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ মার্চ: নারী দিবসের তিন দিন পরই নতুন বাবা-মা’র হাত ধরে ইতালি পাড়ি দিচ্ছে ‘পরিত্যক্ত’ কন্যা। দুই দিদির পর আবারও ‘মেয়ে’ জন্মানোর অপরাধে চার বছরের হালিমা-কে খড়গপুর স্টেশনে বসিয়ে রেখে পালিয়ে যায় ‘হৃদয়হীন’ বাবা-মা! উদ্ধার করে রেল পুলিশ। এরপর, পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, শিশুকন্যার বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলাতে। তবে, কোনভাবেই পুলিশ তার বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের করতে পারে না। এরপরই, ছোট্ট মেয়েটিকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে রাঙামাটিতে অবস্থিত সরকারি ‘শা’ (SAA/ Specialized Adoption Agency) হোমে তথা বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে। হোম কর্তৃপক্ষের স্নেহ ও সাহচর্যেই বড় হয়েছে হালিমা। বছর ১২-র নাবালিকা এখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। মঙ্গলবার ইতালির রেগিও এমিলিয়া (Reggio Emilia)-র বাসিন্দা, চিকিৎসক দম্পতির হাত ধরে ইতালির পাড়ি দিচ্ছে হালিমা। পেশায় অর্থোপেডিক সার্জেন (অস্থি বিশেষজ্ঞ) ফিলিপো মর্শিয়ানি (Filippo Morsiani) এবং কার্ডিয়াক সার্জেন (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) এলিনা রিঘি সমস্ত নিয়ম মেনে হালিমা-কে দত্তক নেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের হাতে হালিমা-র পাসপোর্ট, ভিসা সহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র তুলে দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কেম্পা হোন্নাইয়া। জেলাশাসকের কার্যালয়ে এদিন উপস্থিত ছিলেন শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস সহ অন্যান্যরাও। মেদিনীপুর হোমের হালিমা ছাড়াও এদিন ডেবরার হোমের এক নাবালক (৭ বছরের)-কে দত্তক নেন বারাসতের এক শিক্ষক দম্পতি। তাঁদের হাতেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র তুলে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের তরফে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের শেষের দিকে খড়গপুর স্টেশনে ইতঃস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল চার বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে। খুঁজছিল নিজের বাবা-মা’কে। রেল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ছোট্ট মেয়েটির আর বাবা-মায়ের খোঁজ মেলে না! আদালতের নির্দেশে তার ঠাঁই হয় মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনের ‘শা’ হোমে। এদিকে, ইতালীয় দম্পতি ফিলিপো ও এলিনার ২২ বছরের এক পুত্র সন্তান আছেন। তাঁরা একটি কন্যা সন্তান দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। সেইমতো ২০১৯ সালে আফা (AFAA/Authorised Foreign Adoption Agency)-তে আবেদন জানান। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মেদিনীপুর শহরের ‘শা’ (SAA/ Specialized Adoption Agency) থেকে হাধিমা-কে ‘কন্যা’ হিসেবে দত্তক নেন চিকিৎসক দম্পতি। মঙ্গলবার তাঁরা বলেন, “আমাদের এক পুত্রসন্তান আছে। আমরা একটি কন্যা সন্তান দত্তক নিতে চেয়েছিলাম। হালিমা-কে প্রথম দেখাতেই আমাদের পছন্দ হয়। আমরা ওকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চাই।” ওকেও কি নিজেদের মতো চিকিৎসক রূপে দেখতে চাইবেন? ফিলিপো-এলিনা মিষ্টি হেসে জবাব দেন, “আমাদের ইচ্ছে নয়, ওর ইচ্ছেই প্রাধান্য পাবে!” লাজুক হালিমা অসাধারণ ছবি আঁকে। মঙ্গলবার নতুন বাবা-মা’র জন্য সে একটি ছবি এঁকে এনেছিল, উপহার হিসেবে। হালিমা এঁকেছিল রঙিন প্রজাপতির ছবি। দীর্ঘ কষ্ট-যন্ত্রণা শেষে সেও যে এবার প্রজাপতির মতোই উড়ে যাবে নতুন বাবা-মা’র হাত ধরে!
মঙ্গলবারই ডেবরার হোমে থাকা ৯ বছরের এক নাবালককে দত্তক নেন বারাসতের এক শিক্ষক দম্পতি। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তাকে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার ঠাঁই হয় এনজিও (চককুমার অ্যাসোসিয়েশন ফর স্যোশাল ওয়েলফেয়ার) পরিচালিত ডেবরার হোমে। মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কেম্পা হোন্নাইয়া বলেন, “২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৬২ জন শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৯ জন দেশের বাইরে অর্থাৎ ইউএসএ, ইতালি, বেলজিয়াম সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। ৪৪ জন দেশের মধ্যে আর বাকি ৯ জন শিশুর আত্মীয় বা পরিজনদের দত্তক দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক শিশুকন্যা ইতালি এবং এক শিশুপুত্র কলকাতা সংলগ্ন বারাসাতে পাড়ি দিচ্ছে। আরো এক শিশু আগামী মাসে ইতালি যাবে। গত ডিসেম্বরেও এক শিশুকন্যা ইতালি গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হবে।” মেদিনীপুরের ‘শা’ হোমে আর মাত্র ৬ জন শিশু আছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…