Paschim Medinipur

Midnapore: বাবা-মা-বোনের পর না ফেরার দেশে সুদীপও! পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রামে দেহ পৌঁছনোর পর শুধুই হাহাকার

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ ফেব্রুয়ারি: শেষ রক্ষা হল না! বাবা, মা, বোন, মাসী, মাসীর মেয়ের পর না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ছোট্ট সুদীপও! ধানবাদে ময়নাতদন্তের পর সোমবার রাত্রি ১১টা নাগাদ গড়বেতার নলপার বাড়িতে পৌঁছয় সুদীপের নিথর দেহ। আর তারপর শুধুই হাকাকার। জ্ঞান হারাচ্ছেন ঠাকুমা! ছেলে, বৌমা, নাতনির পর চলে গেল নাতিটাও। নিভল সব আশার প্রদীপ! জেঠু, জেঠিমা, দাদা (বড় জেঠুর ছেলে), দিদিরা (মেজ ও সেজ জেঠুর মেয়েরা) কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। প্রসঙ্গত, কুম্ভ যাওয়ার পথে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত্রি দেড়টা নাগাদ ধানবাদের রাজগঞ্জ থানা এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় গড়বেতা থানার নলপা গ্রামের প্রণব সাহা (৪২), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা (৩৪) এবং বছর পাঁচেকের শিশুকন্যা অন্বেষার। ধানবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল প্রণব-শ্যামলী-র ছেলে সুদীপ (১৩)। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ যুদ্ধ শেষ হয় ছোট্ট সুদীপের! মা-বাবা-বোনের মতোই চির ঘুমের দেশে পৌঁছে যায় বছর ১৩-র এই নাবালক। শুধু প্রণবের গোটা পরিবারই নয়, দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত তাঁর শ্যালিকা (পিয়ালী সাহা)-র পরিবারও। একই গাড়িতে (দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্করপিওতে) ছিলেন পিয়ালী, তাঁর স্বামী স্বরূপ এবং তাঁদের দুই সন্তানও। মৃত্যু হয়েছে পিয়ালী (৩০) ও তাঁর শিশুকন্যা আগমনী (৬)-র। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন পিয়ালীর স্বামী তথা হুগলির গোঘাটের বাসিন্দা স্বরূপ সাহা (৪৫)। এছাড়াও, স্করপিওর চালক, হুগলির গোঘাটের বাসিন্দা সেখ রজব আলীরও মৃত্যু হয় ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায়। রবিবার সুদীপের মৃত্যুর পর, ধানবাদের দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭।

ছোট্ট সুদীপ:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

ধানবাদের একটি সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে প্রণব, শ্যামলী ও ছোট্ট অন্বেষার দেহ ফিরেছে নলপা গ্রামে। বাড়ির অদূরেই শ্মশানে দাহ করা হয়েছে প্রণব ও শ্যামলী-কে। বাবা-মা’র মাঝে সমাধিস্থ করা হয়েছে ছোট্ট অন্বেষাকে। রবিবার দুপুরে সে কথার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম। শোকে মুহ্যমান প্রণবের গোটা পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনেরা। শুধু পরিবার নয় গ্রামের সকলেরই প্রিয় পাত্র ছিলেন বছর ৪০-র প্রণব। গ্রামের যেকোন উৎসব-অনুষ্ঠানে এগিয়ে আসতেন প্রণব। বন্ধু অর্ণব সুরজিৎ, বিষ্ণু-দের আক্ষেপ, “অনেক করে বলেছিলাম যাওয়ার দরকার নেই। এও বলেছিলাম, যাচ্ছিস যা বাচ্চা দুটোকে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই! ও বললো, এরকম সুযোগ (মহাকুম্ভের মহাযোগ) তো বারবার আসবে না! সবাই মিলে যাচ্ছি। ঠিকঠাক চলে আসব!” বন্ধু আর ফিরল না! শেষ হয়ে গেলে প্রণবের পুরো পরিবারই।

শোকের ছায়া:

চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন প্রণব। বড় দাদা প্রহ্লাদ ছোট্ট একটি বাড়ি করে পৃথক থাকতেন। দোতলা বড় বাড়িতে বাকি দুই দাদাকে নিয়ে থাকতেন প্রণব। বছর দশেক আগে বাবা সাধন সাহা মারা গিয়েছেন। মা সুমিত্রা দেবীর ‘আদরের গোপাল’ অকালেই চলে গেলেন ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। খবর পাওয়ার পর থেকেই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন বৃদ্ধা সুমিত্রা সাহা (৭০)। জ্ঞান ফিরলেই বলে চলেছেন, “ওরে গোপালরে তুই আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলি রে…!” ছোট্ট অন্বেষাকে ঠাকুমা ‘বোনু’ বলে ডাকতেন। কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠেন, “ওরে আমার বোনুরে। আর কে বলবে, ঠাকুমা কি এঁকেছি দেখ!” প্রণবের প্রতিবেশী তথা বন্ধু সুরজিতের বাড়িতেই থাকত ছোট্ট অনু। সুরজিতের স্ত্রী রিঙ্কু কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, “আমাকে তাতি আর ওকে (সুরজিতকে) তাতু বলতো। আমার কাছেই থাকত! আমাদের একটি ছেলে (বছর দশেকের) আছে। অনু ছিল আমার মেয়ের মত।” সুরজিতের বাবা-মা যুধিষ্ঠির সাহা ও পারুল সাহার কান্না থামছেনা শনিবার সকাল থেকেই। রবিবার দুপুরে তাঁরা বলেন, “কত করে প্রণবকে বললাম, বাচ্চা দুটোকে নিয়ে যাস না। আমাদের কাছে রেখে যা! হায় হায় গো সব শেষ হয়ে গেল।” সোমবার সন্ধ্যায় ধানবাদে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর প্রণব-শ্যামলীর নাবালক সন্তান সুদীপের দেহ এসে পৌঁছেছে নলপা গ্রামে। মঙ্গলবার ভোরে বাবা-মা’র পাশেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। বুকে পাথর চাপা দিয়ে নীরবে সব কাজ করে চলেছেন প্রতিবেশীরা। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ থেকে শাসকদলের নেতৃত্বরাও। গড়বেতা-১নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেবব্রত ঘোষ বলেন, “ওঁরা যা হারিয়েছেন, তা তো ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়; তবে, আমরা পরিবারের পাশে আছি। আমাদের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র নির্দেশে আজ আমরা যথাসাধ্য আর্থিক সহায়তাও তুলে দিয়েছি।” জেলা পুলিশের তরফেও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গড়বেতা থানার ওসি। এত সব কিছুর পরও গ্রাম জুড়ে সব হারানোর শোক! পরিবার জুড়ে শুধুই হাহাকার। গ্রামের যুবক তথা পেশায় সমাজকর্মী সুশান্ত পারিয়াল বলেন, “হে ভগবান! তুমি এত নির্দয়, নিষ্ঠুর? এত ভালো একটা পরিবার। মানুষের উপকার ছাড়া, কখনও কারুর কোন অপকার করেনি! পুণ্যের আশায় পাড়ি দিয়েছিল। তার শাস্তি এই?”

প্রণব ও শ্যামলী:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

News Desk

Recent Posts

Ghatal Flood: নদীতেই ‘রোপওয়ে’? চন্দ্রকোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়ুয়াদের যাতায়াত; প্লাবিত ঘাটালে তলিয়ে মৃত্যু এক ব্যক্তির

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: বানভাসি ঘাটালের দুর্যোগের নানা চিত্র! কোথাও সেতু…

10 hours ago

Midnapore: স্ত্রী-র পরকীয়া ধরে ফেলেছিলেন, ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে পুরো পরিবারকেই খুনের ছক, মৃত্যু স্বামীর; সিনেমাকেও হার মানাবে ডেবরার ঘটনা

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ আগস্ট: স্ত্রী-র পরকীয়ার বলি স্বামী! মৃত স্বামীর নাম বুদ্ধদেব দোলাই…

2 days ago

Medinipur: গড়বেতার নির্জন এলাকায় রেললাইনে হঠাৎ বিকট ‘শব্দ’, থমকালো রাজধানী! নমুনা সংগ্রহের পর ফরেন্সিক দল যা জানাল…

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট: শিলাবতী নদীর উপর রেলওয়ে ব্রিজ। তার উপরই…

4 days ago

Midnapore: একদিকে চন্দ্রযান, অন্যদিকে হরিনাম; শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-ক্রীড়া ও পরিবেশের অভূতপূর্ব মেলবন্ধন বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের বার্ষিক প্রদর্শনীতে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: আধুনিক যুগের বিজ্ঞান থেকে সনাতন সংস্কৃতি, যোগব্যয়াম-খেলাধুলার…

6 days ago

Kharagpur: নতুন কারখানায় কাজ শুরু করবে রশ্মি মেটালিক্স, বাধা সৃষ্টি হলে পুলিশের পদক্ষেপ; নির্দেশ আদালতের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: নতুন কারখানায় অবিলম্বে কাজ শুরু করতে পারবেন…

6 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের একটি বুথেই ৪৯ জন ‘মৃত’ ভোটার, মৃত্যুর ৭ বছর পরও বাদ পড়েনি নাম! প্রশাসনের ঘাড়েই দায় চাপালেন BLO

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: SIR-এর নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। এই ইস্যুতে…

6 days ago