Recent

Medinipur: জনরোষে মৃত্যু হয়েছে পার্থ ঘনিষ্ঠ ‘চাকরির দালাল’ নান্টু প্রধানের, চাকরিপ্রার্থীদের লক্ষ লক্ষ টাকা ফেরাচ্ছেন বাবা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পূর্ব মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: শাসকদলের নেতা হওয়ার সুবাদে চাকরির দালালি সহ একাধিক অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর এলাকার কুখ্যাত ‘ভেড়ি মাফিয়া’ নান্টু প্রধান।‌ কোটি কোটি টাকা তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে। প্রথমের দিকে শুভেন্দু অধিকারী এবং তারপর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সূত্রে অনেককেই লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি করেও দিয়েছিলেন। আর, তা ভাঙিয়েও আরও কোটি কোটি টাকা তুলেছেন। একাধিক ট্রাক, ট্রাক্টর, জেসিবি সহ বানিয়েছিলেন রাজপ্রাসাদের মতো সুবিশাল বি.এড-ডি.এল.এড কলেজ। সামনে মহাত্মা গান্ধীর প্রকাণ্ড মূর্তি। অজস্র বানান ভুলে ভরা ফলকে উদ্বোধক হিসেবে উল্লেখ করা আছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের-ই নাম। সেই নান্টু জনরোষে আক্রান্ত হয়ে খুন হন ২০১৮ সালে (ফেব্রুয়ারি মাসে)। তারপর, কলেজের সামনে বসানো হয়েছে নান্টু’র চোখধাঁধানো প্রস্তর মূর্তি। তবে, সম্প্রতি অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নান্টু’র বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের লাইন পড়ে গেছে। যদিও, তাঁর বাবা সত্তরোর্ধ্ব চাঁদহরি প্রধান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ প্রার্থীকে ১৫ কোটির বেশি ফেরত দেওয়া হয়ে গেছে। আর সামান্য কিছু জন পাবেন!

নান্টু প্রধান প্রতিষ্ঠিত সেই ট্রেনিং কলেজ :

প্রভাব খাটিয়ে চাষের জমিকে ভেড়িতে পরিণত করতে গিয়ে ২০১৮ সালে (২৪ ফেব্রুয়ারি) জনরোষে মৃত্যু হয় নান্টুর। পরের দিন সকালে সেই জমি থেকেই নান্টুর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জানা যায়, এলাকাবাসীর ত্রাস হয়ে ওঠা তৃণমূলের তৎকালীন উপ প্রধান নান্টু-কে রীতিমতো জমিতে ছুটিয়ে ছুটিয়ে মেরেছিলেন অত্যাচারিত এলাকাবাসী। সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী-ও খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন। বিরোধী (সিপিআইএম ও বিজেপি) দলগুলির দিকেই আঙুল তুলেছিলেন। তবে, বিশ্বস্ত সূত্রে সেই সময় জানা গিয়েছিল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর সাধারণ মানুষের জনরোষের কারণেই ‘ভেড়ি মাফিয়া’ নান্টু-কে নির্মম ভাবে খুন হতে হয়েছিল! সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী-র থেকেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন নান্টু। আর, পার্থ’র কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর-ই মৃত নান্টু ফের একবার শিরোনামে! লক্ষ লক্ষ টাকা অ্যাডভান্স দিয়েও চাকরি না পাওয়া ছেলেমেয়েরা বা তাঁদের অভিভাবকরা আজ নান্টুর দুয়ারে! তাঁর বাবা চাঁদহরির দাবি, ছেলের মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরাতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়েছে তাঁকে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাকিদের টাকাও তিনি ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন চাঁদহরি।

বাবা চাঁদহরি প্রধান:

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিলেন চাঁদহরি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, রাজ্যে তৃণমূল জমানা শুরু হওয়ার পর থেকেই মহম্মদপুরে দাপট বাড়তে থাকে প্রধান পরিবারের। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন নান্টু। স্ত্রী অপর্ণাও পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছিলেন। নান্টুর ভাই পিন্টু ভগবানপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং নান্টুর শাশুড়িও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। ক্ষমতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নান্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাও বাড়ছিল। পঞ্চায়েতে দুর্নীতি, তোলাবাজি, সেচ দফতরের আধিকারিকদের মারধর, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কাজ আটকে দেওয়া, বেনামে ঠিকাদারি— নানা অভিযোগ উঠেছিল নান্টুর বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় নান্টুর। পরিবারের দাবি, মাছের ভেড়ি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে নান্টুকে খুন হতে হয়েছে। চাঁদহরি বলেন, “ছেলের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত  প্রায় ৫০০ জনের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। কেউ ৫০ হাজার। কেউ ৫ লাখ টাকা পেতেন। ধীরে ধীরে তাঁদের টাকা ফেরাচ্ছি। শেষ কয়েক বছর ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল না। ওঁর মৃত্যুর পর আবার ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়। এর পরেই চাকরিপ্রার্থীরা টাকা ফেরত চেয়ে ঝামেলা শুরু করেন। সেই চাপ আমার উপরই আসে।” যদিও, নান্টু প্রসঙ্গে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দাসের দাবি, “নান্টু প্রধান কী করেছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তৃণমূল দল এর জন্য কোনও ভাবেই দায়ী নয়। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই ওই পরিবারের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”

অজস্র বানান ভুল থেকে শুরু করে ‘জাতির জনক’ কে ‘জাতীয় জনক’ করেছেন নান্টু, আর তা উদ্বোধন করেছেন টুকে PhD’র অভিযোগে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়:

জমি থেকে উদ্ধার হয়েছিল নান্টুর রক্তাক্ত মৃতদেহ:

কলেজের সামনে বসানো নান্টু প্রধানের মূর্তি:

বিজ্ঞাপন:

News Desk

Recent Posts

Midnapore: সততার পরিচয় দিয়ে শিক্ষকদের মন জিতলো ভাদুতলা স্কুলের সাত্যকি, মনে করালো বর্ণপরিচয়ের নীতিশিক্ষার কথা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুন: বাঙালির ভাষা শিক্ষা আর নীতিশিক্ষার ভিত গড়ে…

23 hours ago

Midnapore: জঙ্গলে মহিষ খুঁজতে গিয়ে দলছুট হাতির হামলায় মৃত্যু দাদার, আশঙ্কাজনক ভাই! শোকের ছায়া শালবনীতে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: গবাদি পশু (মহিষ) খুঁজতে বেরিয়ে দলছুট দাঁতালের…

5 days ago

Midnapore: “এক ট্রলি মোরাম নিয়ে গেলেও পুলিশ ধরছে!” পর্যালোচনা বৈঠকে অনুযোগ খোদ মন্ত্রীর; ‘জবাব’ দিল জেলা পুলিশও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পঞ্চায়েত…

5 days ago

JEE Advance: JEE মেইনসে টপার, অ্যাডভান্সে কেমন ফল করল খড়্গপুরের অর্চিষ্মান? জেনে নিন

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জুন: গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স…

5 days ago

Midnapore: ছুটিতেও ছুটি নেই মেদিনীপুরের বিপ্লব স্যারের! জামাইষষ্ঠীর দিনই স্কুলে রক্তদান উৎসব, রক্ত দিলেন ১৬৫ জন

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ জুন: ছুটিতেও ছুটি নেই তাঁর। গত কয়েকদিন ধরে…

7 days ago

Midnapore: আদালতের নির্দেশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে মেদিনীপুর শহরে আক্রান্ত পুলিশ ও পুরকর্মীরা, গ্রেফতার ৪

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মে: আদালতের নির্দেশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে আক্রান্ত…

1 week ago