মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জানুয়ারি: ২০১৯-‘২০ শিক্ষাবর্ষে এন এস এস বা জাতীয় সেবা প্রকল্পে (National Service Scheme) রাজ্যের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনীত হয়েছে ‘জঙ্গলমহল’ পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘গর্ব’ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University)। গত ১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবসের (AIDS Day) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই খুশির খবরটি জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু। সম্প্রতি, ৭ জানুয়ারি, শুক্রবার বেলুড় মঠের প্রেক্ষাগৃহে সেই পুরস্কার তুলে দেওয়া হল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু এবং এনএসএস কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। উল্লেখ্য যে, এই পুরস্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম। গত কয়েক বছরে ১৩ টি গ্রাম দত্তক নিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা জনহিতকর কাজের সাথে যুক্ত। পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নানা সামাজিক কাজকর্ম এবং সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিভিন্ন সময় মানুষের কাছে তুলে ধরে। এ বিষয়ে উপাচার্য কিংবা বিভাগীয় অধ্যাপক অধ্যাপিকাগণ ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ প্রদান ও অনুপ্রেরণা যোগান। সেই সমস্ত কাজের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ‘বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়’কে স্বীকৃতি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে। এছাড়াও, ইউনিট 7 এর প্রোগ্রামার অফিসার তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুরথ কুমার মালিক ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সেরা প্রোগ্রামার অফিসার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এছাড়াও, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রাজা নরেন্দ্র লাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয় এবং বেলদা মহাবিদ্যালয় NSS বা জাতীয় সেবা প্রকল্পে ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছে।
অন্যদিকে, NSS এর ‘স্টেট অ্যাওয়ার্ড’ (State Award) পেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গর্বিত করলেন সবং ব্লকের নওগাঁ ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত প্রত্যন্ত গ্রাম মানিকড়া-র কৃতি সন্তান বিকাশ চন্দ্র ঘোড়াই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনারত বিকাশ-কেও সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য NSS এর State Award এ সম্মানিত করা হয়েছে। সবংয়ের বিকাশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের NSS ইউনিট- 12 এর সদস্য। ২০১৭-‘১৮ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় সেবা প্রকল্প উল্লেখযোগ্য কাজকর্মের জন্য তাঁর হাতে ৭ জানুয়ারি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আদ্যন্ত বাঙালি পোশাক ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বছর ২৫ এর বিকাশ পুরস্কার গ্রহণ করেন। রবিবার সকালে তিনি আমাদের জানান, “বন্যার সময় রামকৃষ্ণ মিশনের নেতৃত্বে আমরা কাজ করেছি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএসএসের একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই রাজ্য সরকারকে, এই ধরনের পুরস্কার আরও ভাল কাজে উৎসাহিত করবে।” যদিও সবংবাসী বলছেন, মেধাবী ও উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন বিকাশ তাঁর গ্রামে গত কয়েক বছর ধরেই গড়ে তুলেছেন ‘বর্ণপরিচয়’ নামে এক অবৈতনিক পাঠশালা। এডুকেশন (Education) বিষয়ের উপর গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকার জন্য নিজে এখন সময় দিতে পারেন না, তাই তিনি এলাকার তিনজন যুবকের উপর এই দায়িত্ব দিয়েছেন। নিজের ফেলোশিপের টাকা থেকে তাঁদের হাতে মাঝেমধ্যেই তুলে দেন যথাসাধ্য সাম্মানিক। স্বভাবতই, বিকাশের এই সম্মান লাভে গর্বিত সারা সবংবাসী!