দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ এপ্রিল: বয়স হয়ে গেছে। হাঁটতে চলতে পারেন না। উপস্থিতির হার অনিয়মিত। এই কারণ দেখিয়ে, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের নামকরা প্রাথমিক বিদ্যালয় মেদিনীপুর জিএসএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (Midnapore GSFP Primary School) মিড-ডে মিলের দুই রাঁধুনি বা সহায়িকা (Cook cum Helper)-কে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই ওয়ার্ডের (মেদিনীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের) ‘ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটি’ (Ward Education Committee)র চেয়ারম্যান তথা এলাকার কাউন্সিলর বিপ্লব বসু (সৌরভ)’র বিরুদ্ধে। সবিতা গিরি এবং সুপ্রিয়া দলবেরা নামে ওই দুই রাঁধুনি বা সহায়িকার দাবি, মার্চ মাসের ৩১ তারিখ, হঠাৎ তাঁদের ডেকে কাউন্সিলর তথা ওই কমিটির প্রধান বিপ্লব বসু ওরফে সৌরভ বসু জানিয়ে দেন, “কাল থেকে আর কাজে আসার দরকার নেই!” পুরোটাই, কোনো এক অজানা কারণে এবং মৌখিকভাবে করা হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। যদিও, বিপ্লব বাবু’র দাবি, “সঠিক কারণ আছে, তাই বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সেই অধিকার আছে।” তাঁর আরও দাবি, “ওদের মধ্যে একজনের বয়স হয়ে গিয়েছে। তিনি নিজেই হাঁটাচলা করতে পারেন না, রান্নার কাজ করবেন কীভাবে! আরেকজন নিজে করতে আসছেন না, বরং প্রক্সি হিসাবে তাঁর স্বামীকে পাঠিয়ে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধভাবে। তাই ওয়ার্ড কমিটির মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

thebengalpost.net
সবিতা গিরি :

যদিও, কাউন্সিলরের দাবি উড়িয়ে দিয়ে, মেদিনীপুর শহরের ধর্মা এলাকার বাসিন্দা বরখাস্ত হওয়া ওই দুই মহিলার দাবি, তাঁদের এমন কিছু বয়স হয়নি (বয়স আনুমানিক ৫০-৫২), তাঁরা অক্ষমও নন। বরং, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে বা পছন্দমতো লোক ঢোকাতেই, অনৈতিকভাবে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও লাভ হয়নি । তাই তাঁরা মামলা’র পথে হাঁটবেন। তাঁরা ইতিমধ্যে আইনজীবী মারফত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা ওই কমিটির সেক্রেটারি পার্থ প্রতিম মণ্ডলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন, সঠিক কারণ দর্শানোর জন্য। তবে, তিনিও অসহযোগিতা করছেন বলে সবিতা দেবী ও সুপ্রিয়া দেবীর অভিযোগ। এই বিষয়ে ক্যামেরার কিছু বলতে চাননি প্রধান শিক্ষকও। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, ‘ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটি’ তথা কাউন্সিলরের সিদ্ধান্তে তাঁর কিছু করার নেই। যদিও, শিক্ষা দপ্তরের ২০১৯ সালের একটি নির্দেশিকা (৩০ আগস্ট, ২০১৯) অনুযায়ী, “যথাযথ কারণ ছাড়া মিড-ডে মিলের কুক কাম হেলপার (Cook Cum Helper)-দের বাদ দেওয়া যাবেনা। কারণের যথার্থতা খতিয়ে দেখতে হবে জেলা প্রশাসনকে।” যদিও, এই বিষয়ে এখনও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। জেলার প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ওঁরা যদি সিদ্ধান্তে অখুশি হন বা সিদ্ধান্ত অনৈতিক বলে মনে করেন, তবে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন।” অপরদিকে, মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটি বৈঠক ডেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। এখনও ওনাদের অভিযোগ পাইনি।” যদিও, কাউন্সিলর বিপ্লব বসু’র দাবি, তিনি সবকিছু নিয়ম মেনে করেছেন! অপরদিকে, এই ঘটনায় মামলার দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন, সবিতা দলবেরা ও সুপ্রিয়া গিরি।