তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ সেপ্টেম্বর: ১৭ দিনের লড়াই শেষে চির ঘুমের দেশে পশ্চিম মেদিনীপুরের তিথি! নার্সিং পড়তে চেয়েও, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে লোন পায়নি সে। দুঃখ-যন্ত্রণায় গত ১৪ আগস্ট বিষ খেয়েছিল চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ নাম্বার ওয়ার্ডের অষ্টাদশী কন্যা। গত ১৫ আগস্ট তাকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। আইসিইউ-তে ১৬ দিনের লড়াই শেষে মৃত্যুবরণ করল তিথি দোলই। সেখানেই ময়নাতদন্তের শেষে দেহ পৌঁছবে চন্দ্রকোনার ভেয়েরবাজার এলাকায় নিজের বাড়িতে। শোকস্তব্ধ বাবা জয়দেব দোলই! গত ১৭ দিন ধরেই একপ্রকার শোকে মুহ্যমান মা রিঙ্কু দোলই। তাঁদের একটাই আক্ষেপ, “একটাই আক্ষেপ। মেয়েটা শুধু পড়তে চেয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে সেও ভর্তি হয়ে গিয়েছিল নার্সিংয়ে। কিন্তু, লোন‌ দিলোনা কোনো ব্যাঙ্ক! কিভাবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেটানো হবে? সেই দুঃশ্চিন্তা আর হতাশায়…!”

thebengalpost.net
তিথি দোলই:

জানা যায়, কৃষক বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাই ব্যাংকের ম্যানেজারদের হাতে-পায়ে ধরে বলেছিল, “আপনারা মাসে মাসে যা পারবেন সুদ নিন, আমাকে লোন দিন। আমি ব্যাঙ্গালোরে পড়তে যাব।” লোন পেয়ে যাবে, এই আশাতেই ভর্তিও হয়ে গিয়েছিল তিথি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত লোনটা হলো না! ব্যাংকের ম্যানেজার এ কথা জানিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই, গত ১৪ আগস্ট বিষ খায় শৈশব থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ নাম্বার ওয়ার্ডের ভেয়েরবাজার এলাকার জয়দেব দোলই ও রিঙ্কু দোলই- এর একমাত্র মেয়ে তিথি দোলই। উল্লেখ্য যে, ভর্তি হওয়ার সময়ই ব্যাঙ্গালোরের নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, কোর্স কমপ্লিট করতে খরচ পড়বে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। ভর্তির সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিথি এক লক্ষ টাকা জমা দিয়ে কলেজে ক্লাস শুরু করে। বাকি টাকার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে আবেদন করেছিল তিথি। তিথি সহ তার বাবা-মা ভেবেছিলেন, লোনটা হয়ে যাবে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তা না হওয়াতেই, বিষ খেয়েছিল তিথি। এরপর, চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ঘাটাল থেকে মেদিনীপুর। শেষ হল ১৭ দিনের লড়াই!

thebengalpost.net
শুধুই আক্ষেপ :