দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ জানুয়ারি: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বছর ১৭’র কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছিল। পরিবার সহ এলাকাবাসী আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন বছর ১৮’র এক কলেজ পড়ুয়ার দিকে। নিহত কিশোরীর বাবা লিখিত অভিযোগ-ও দায়ের করেছিলেন থানায়। অবশেষে অভিযোগ পাওয়ার ৩ দিনের মাথায় অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করল মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ। রবিবার (১ জানুয়ারি) রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মেদিনীপুর শহরেরই একটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং আজ, সোমবার দুপুরে তাকে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয়। আদালত ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরেরই। একই শহরে, কাছাকাছি দুই পাড়াতেই বাস করত বছর ১৭’র দেবস্মিতা (নাম পরিবর্তিত) ও বছর ১৮’র সুমিত। শহরেরই একটি স্কুলের ওই ছাত্রী’র এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। ছেলেটি সম্প্রতি একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দু’জনের মধ্যে বছরখানেক (বা, কিছু বেশি) ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই, ঝগড়াঝাঁটি-অশান্তি হয় বলে সূত্রের খবর। তারপরই গত ২৭ ডিসেম্বর রাত্রি ৯টা নাগাদ নিজের বাড়িতে ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় দেবস্মিতা (নাম পরিবর্তিত)। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে এই দৃশ্য দেখতে পান! খবর দেওয়া হয় কোতোয়ালি থানায়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত-ও হয়। ২৯ ডিসেম্বর কোতোয়ালি থানায় সুমিত খান (মিঞাবাজারের বাসিন্দা) নামে ওই যুবকের (প্রেমিকের) বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া, ব্ল্যাকমেলিং, শ্লীলতাহানি- প্রভৃতি অভিযোগ এনে FIR দায়ের করেন দেবস্মিতা (নাম পরিবর্তিত)’র বাবা। এদিকে, অভিযোগ করার সাথে সাথেই ওই যুবককে গ্রেফতার না করায়, এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গতকাল অর্থাৎ রবিবার সন্ধ্যায় মোমবাতি সহকারে মৌন মিছিল করে কোতোয়ালি থানার সামনে এসে জড়ো হন। অবিলম্বে ওই যুবককে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়। এরপর রাতের মধ্যেই যুবককে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা। সোমবার তাকে তোলা হয় আদালতে। ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন মেদিনীপুর আদালতের বিচারক। যুবকের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেল ও শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কোতোয়ালি থানা।
এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, আত্মহত্যা’র আগের মুহূর্তেও ভিডিও কলে বা সাধারণ কলে প্রেমিকের সঙ্গে কথা হয়েছিল দেবস্মিতা (নাম পরিবর্তিত)’র। তার ফোন ঘেটে নাকি তেমনই তথ্য পাওয়া গেছে। কাজেই আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবকের বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, জোরজবরদস্তি করে নানা ছবি তুলে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। রাস্তায় শ্লীলতাহানিও করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। মেয়েটির বাবার অভিযোগ অনুযায়ী, “ওর ফোন ঘেঁটে দেখা গেছে একাধিকবার ফোন, ডিডিও কল করা হয়েছে। ওর কোনো ‘ছবি’ নিয়ে ব্ল্যাকমেলিং এর জন্যই এরকম করা হয়েছে।” তবে, সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে সুমিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের তরফে। তাদের মতে, প্রায় ২ বছরের সম্পর্ক। কিছু বিষয় নিয়ে সম্প্রতি হয়তো ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান হয়েছিল। তাতেই ‘অভিমানাহত’ কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছেন! জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরদিকে, এই বিষয়ে মেদিনীপুর শহরের এক মনোবিদ জানিয়েছেন, “নানা কারণে বর্তমান সময়ে নাবালক-নাবালিকাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সহিষ্ণুতা শক্তি অত্যন্ত কমে গেছে। এজন্য, পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সামাজিক ও পারিবারিক একাধিক কারণ দায়ী। পরিবারের সদস্যদের আরও বেশি করে সময় দেওয়া প্রয়োজন। ছেলেমেয়েদের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দিয়ে, বন্ধুর মতো মিশতে হবে, কোথায় তার সমস্যা জানার জন্য।”