তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ মার্চ: ডিএ (DA) বঞ্চনার প্রতিবাদ, নতুন নিয়োগের দাবি সহ নানা কারণে আজ, শুক্রবার, ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। প্রায় ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকেই তাঁরা নির্ধারিত এই কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন এবং তা সফল করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ‘ন্যায্য দাবি’ বলে সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ! অন্যদিকে, গত ১ সপ্তাহ ধরে এই ধর্মঘট ব্যর্থ করতে মাঠে নেমেছেন শাসকদল সমর্থিত কর্মচারী ও শিক্ষক সংগঠনগুলি। এমনকি, বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) তাঁরা রাজপথে মিছিলও করেছেন। তবে বলাই বাহুল্য তাঁদের মিছিলকে ছাপিয়ে গিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং বাম প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী সংগঠনের মিছিল! কারণ, কে আর ‘নিজের হকের টাকা (DA)’র অধিকার ছাড়তে চায়। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলেই নবান্ন তথা রাজ্য সরকারের তরফে যথারীতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামীকাল শিক্ষক, ডাক্তার, বিচারক সহ সকল সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কোনোরকম সি.এল (ক্যাসুয়াল লিভ) অনুমোদিত হবেনা! এমনকি, বিশেষ ২-৩টি জরুরি কারণ (হাসপাতালে ভর্তি, প্রিয়জনের অসুস্থতা বা প্রিয়জন বিয়োগ সহ কয়েকটি কারণ) ছাড়া কোনোভাবেই যে ছুটি বরদাস্ত করবেন না প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা, তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর অন্যথা হলে শুধু বেতন কাটাই নয় ‘সার্ভিস ব্রেক’ (ব্রেক ইন সার্ভিস) এর হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পাল্টা অবশ্য সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফেও সরকারের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে! কর্মচারীদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

thebengalpost.net
ক্ষীরপাইয়ের স্কুলে উত্তেজনা:

এদিকে, বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে স্কুল সচল রাখার দাবি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়েছিলেন শিক্ষকদের বোঝানোর জন্য। সেই কথা বলতে গিয়েই তৃণমূল নেতারা স্কুলের শিক্ষকদের একাধিক যুক্তির সম্মুখীন হলেন। যুক্তি পাল্টা যুক্তিতে স্কুল চত্বর সরগরম হয়ে ওঠে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই কাশিগঞ্জ পাত্র পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার ক্ষীরপাই পৌর এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতা যথা ক্ষীরপাই পৌরসভার চেয়ারম্যান দুর্গাশঙ্কর পান, শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বীরেশ্বর পাহাড়ি (কাউন্সিল), কাউন্সিলর নিতাই সিং, শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তারকনাথ মন্ডল সহ একাধিক তৃণমূল নেতা ক্ষীরপাই এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও সরকারি দফতরে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাল কাটে কাশিগঞ্জ পাত্র পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তৃণমূল নেতাদের দাবি শুনে পাল্টা যুক্তি দিয়ে তৃণমূল নেতাদের বোঝান ওই স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা যে চারটি যুক্তি সামনে এনেছেন-
১) মুখ্যমন্ত্রী ডি.এ প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তা সরকারি কর্মচারীদের অপমানিত করেছে।
২) চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সাথে হোক। শিক্ষক সহ সরকারি কর্মচারীরা হাটে-বাজারে গেলেই আওয়াজ উঠছে, ‘সার্টিফিকেটটা ঠিক আছে তো!’ এর জন্য দায়ী কে?
৩) মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন ডি.এ কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু, এখন ১৮০ ডিগ্রি পাল্টি খেয়েছেন!
৪) শিক্ষকদের কাছ থেকে মিড-ডে মিলের দায়িত্ব তুলে নেওয়া হোক।
এই পরিস্থিতিতে এটাই দেখার শুক্রবার শাসক আর সংগ্রামী মঞ্চের মধ্যে টানটান উত্তেজনা পূর্ণ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয়!