Agriculture

প্রতিশ্রুতিই সার! সহায়ক-মূল্যে ধান বিক্রি করতে কালঘাম ছুটছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকদের, বাধ্য হয়েই কম দামে ফোড়েদের বিক্রি

তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ ডিসেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের তরফে বারবার সরকারি সহায়ক মূল্য ধান কেনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কৃষকদের। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কিষান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন জেলার কৃষকরা। আর, তাই বাধ্য হয়েই প্রান্তিক চাষিদের অপেক্ষাকৃত কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ফোড়েদের কাছে। প্রসঙ্গত, প্রান্তিক চাষিদের কথা মাথায় রেখেই ধানের সরকারি সহায়ক মূল্য বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত ১ নভেম্বর থেকে সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রগুলিতে শুরু হয়েছে ধান কেনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২১ টি ব্লকে ২৯ টি ধান ক্রয় কেন্দ্রে চালু হয়েছে ধান কেনা। জেলা খাদ্য দপ্তর সূত্রে খবর, ২০২১-‘২২ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ২ লক্ষ ৩১ হাজার মেট্রিক টন ধান প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে কেনা হবে।

সরকারি বিজ্ঞপ্তি :

উল্লেখ্য যে, রাজ্য সরকার প্রান্তিক চাষীদের পাশে থেকে, সহযোগিতা করার জন্যই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কিষাণ মান্ডি তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য, যাতে কোন চাষীকে অভাবে পড়ে ফড়েদের কাছে অপেক্ষাকৃত কম দামে ধান না বিক্রি করতে হয়! ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি বন্ধ করতেই, সরকারি সহায়ক মূল্যে কুইন্টাল প্রতি ১৯৪০ টাকা দরে ধান কেনা শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। এছাড়াও ধান ক্রয় কেন্দ্র ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল প্রতি কুড়ি টাকা উৎসাহ ভাতা দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। খাদ্য দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, একজন কৃষক খরিফ মরসুমে সর্বাধিক ৪৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। কৃষক বন্ধু কার্ড থাকলেই কৃষকরা ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারবেন। ভাগচাষিরাও সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন। ভাগচাষিকে তাঁর নাম নথিভুক্ত করার জন্য সেল্ফ ডিক্লারেশন সহ এনেক্সার ২ বা এনেক্সার ৩ ফর্ম ফিলাপ করতে হবে।

সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে হিমসিম খাচ্ছেন কৃষকরা :

এদিকে, বন্যা-অতিবৃষ্টি-জাওয়াদের ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন ধান, আলু। কিন্তু, জমি জলে ডুবে নষ্ট হয়েছে ধান, আলু। নতুন করে জমিতে আলু লাগানোর মতো কৃষকদের হাতে টাকা-পয়সা নেই। এই পরিস্থিতিতে, কৃষকদের অভিযোগ, সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে গিয়ে, ধান বিক্রির নির্ধারিত ডেট বা তারিখ পেতে দু-তিনদিন ঘুরতে হচ্ছে! তাছাড়াও, রাজ্য সরকারের ঘোষণার থেকে পরিমাণে কম ধান নেওয়া হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা। এমনই হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন চন্দ্রকোনা ১ ও ২ ব্লকের কিষাণ মাণ্ডিতে ধান বিক্রি করতে আসা চাষীরা। শক্তি সরকার, তপন পান, শক্তিপদ বেরা, মহম্মদ আলি প্রমুখ কৃষকদের অভিযোগ, “এইসব কারণেই আমরা ১৪৫০-১৫০০ টাকা কুইন্টাল দরে (সরকারি সহায়ক মূল্য ১৯৪০ টাকা) ফোড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি”। তাঁদের আরও বক্তব্য, চাষের সময় কিষান মান্ডিতে ধান বিক্রির ডেট করতে তিনদিন থেকে চারদিন সময় লাগছে। আবার যদি নতুন কার্ড করতে হয়, সেখানেও সময় লেগে যাচ্ছে দু’-তিন দিন। ভোর থেকে উঠে নাম লেখানোর পর জানানো হচ্ছে, কবে ডেট দেওয়া হবে সেটা ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হবে। চাষিরা ফোন না পেয়ে আবারও আসছেন কিষান মান্ডিতে ডেট নেওয়ার জন্য। মারাত্মক অভিযোগ, সোজা পথে ডেট পেতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। অথচ, ঘুরপথে সহজেই ডেট পাওয়া যাচ্ছে! আবার কম পরিমাণে ধান নেওয়ার ফলে গাড়ি ভাড়ার খরচ অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। তার উপর কিষান মান্ডিতে অলিখিত নিয়ম আছে, কুইন্টাল প্রতি ৭ কেজি থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত ধান বাদ দেওয়ার নজিরও আছে। অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও চাষিরা কোন সুরাহা পাচ্ছেন না!

বাধ্য হয়ে ফোড়েদের কাছে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা :

অন্যদিকে, প্রশাসনের লোকজন বলছেন, মিলকে যেহেতু ধানের দু’ভাগ চাল দিতে হয়, সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। চাষিদের বক্তব্য, কুইন্টাল প্রতি কত ধান বাদ যাবে, সেটারও একটা সহজ গাইডলাইন থাকা দরকার। যে চাষি ভালো ধান আনছে তার ক্ষেত্রেও সর্বনিম্ন ৭ কেজি ধান বাদ দেওয়া হচ্ছে। অথচ, খোলাবাজার থেকে যখন মিল মালিকরা ধান কেনেন তখন কিন্তু বাদ দেন না! এনিয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি ঘাটাল মহকুমা প্রশাসনের কেউই। সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা। অন্যদিকে, ধান বিক্রিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রকোনার সিপিএম নেতা বিদ্যুৎ রায়। তিনি বলেন, “সঠিক দামে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেননা কিষাণ মাণ্ডিতে। এনিয়ে আন্দোলন শুরু করব আমরা”। ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও, চন্দ্রকোনার দু’টি কিষাণ মাণ্ডিতে কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে কৃষকদের আশ্বাস দিয়েছেন।

News Desk

Recent Posts

Midnapore: এবার শিক্ষা দপ্তরে বদলির নির্দেশিকা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে নতুন DI হচ্ছেন অমিত রায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: এবার শিক্ষা দপ্তরের একঝাঁক আধিকারিকের বদলির নির্দেশিকা…

5 days ago

SP Transfer: পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি হচ্ছেন পলাশচন্দ্র ঢালি, পূর্ব মেদিনীপুর নিয়ে জল্পনা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: SIR আবহের মাঝেই রাজ্যের প্রায় ১০টি জেলার…

6 days ago

Medinipur: খড়্গপুর টাউন থানার আইসি হচ্ছেন পার্থসারথি পাল; বদলি হলেন কেশিয়াড়ি, মোহনপুর, গোয়ালতোড় থানার IC-রাও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: রাজ্যজুড়ে ১৭৫ জন ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হলো।…

6 days ago

Midnapore: মেয়ের অন্নপ্রাশন শেষে জ্বর নিয়েই কাজে যোগ দিয়েছিলেন, ‘কফিনবন্দী’ হয়ে ডেবরায় ফিরলেন CRPF জওয়ান

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: শোকসংবাদটা পৌঁছেছিল শুক্রবারই। বুকে পাথর চেপে অপেক্ষা…

2 weeks ago

Medinipur: মামিমার সাথে ‘অভিসারে’ গিয়ে ফাঁসলেন যুবক? অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে কেশিয়াড়িতে গ্রেপ্তার ‘কলির কেষ্ট’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মামিমাকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক।…

2 weeks ago

Medinipur: প্রায় ৬০ বছর পর রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রীর গড়ে ‘পাকা’ হবে মাটির স্কুলবাড়ি, আনন্দে মিষ্টিমুখ পড়ুয়াদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার 'খাসতালুক' সবংয়ে…

2 weeks ago