তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ ডিসেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার জোতগোবর্ধনের বাসিন্দা মৌমিতা বেরা (৩৪) এবং তাঁর ৮ বছরের ছেলে অভীক ও ১১ বছরের মেয়ে অভিষিক্তা’র পরপর রহস্যমৃত্যু হয়েছে শনিবার (১১ ডিসেম্বর)। প্রাথমিক অনুমান করা হয়েছিল খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে মৌমিতা’র স্বামী সুশান্ত বেরা (মুম্বাই থেকে ফিরে আসার পর) এবং স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসক অজিত পাত্র-কে থানায় আটক করে নিয়ে গিয়েছিল দাসপুর থানার পুলিশ। অন্যদিকে, ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল মৃতদেহগুলি। ওই ঘটনাতেই রবিবার নতুন রহস্যের জন্ম নিল! রবিবার সকালে মৃতার স্বামী সুশান্ত বেরার অভিযোগের ভিত্তিতে হাতুড়ে চিকিৎসক অজিত পাত্রকে গ্রেফতার করে দাসপুর থানার পুলিশ। ওই চিকিৎসকের বাড়ি দাসপুরের বাড়জালালপুরে বলে জানা গেছে। ওই হাতুড়ে চিকিৎসক (গ্রামীণ চিকিৎসক)-ই মৃত মা ও তাঁর দুই সন্তানের চিকিৎসা করছিলেন বলে জানা যায়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। রবিবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে, বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে জ্বর ও পেট খারাপে ভুগছিলেন মৌমিতা ও তাঁর দুই সন্তান। গ্রামের কোয়াক ডাক্তার অজিত পাত্রের ওষুধই সেবন করছিলেন। স্বামী সুশান্ত বেরা সোনার কাজে মুম্বাইতে চলে গিয়েছিলেন গত বুধবার (৮ ডিসেম্বর) নাগাদ। দেখভালের সেরকম কেউ ছিলনা বাড়িতে। বাড়ির অন্য ভাইয়েরা প্রত্যেকেই আলাদা থাকেন। জ্বর নিয়ে বাড়িতেই গ্রামীণ কোয়াক ডাক্তারের চিকিৎসায় ছিলেন তাঁরা। সাথে বমি-পায়খানাও হয় বলে জানা যায়। গতকাল (শনিবার) সকালে বছর ৮ এর ছেলে মারা যায় বাড়িতে এবং নাবালিকা মেয়ে ও মা দাসপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যদিও, সেই নার্সিংহোম থেকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয় বিকেলে। কিন্তু, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই দু’জনের মৃত্যু হয়। এদিকে, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে পুলিশ প্রশাসন! দাসপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। রবিবার পুলিশ প্রশাসন ঘটনার তদন্তে নামে। মৃতার স্বামী সুশান্ত বেরা মুম্বাই থেকে শনিবার রাতে বাড়ি ফিরলে, ওই দিন রাত্রি আড়াইটা-তিনটে নাগাদ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার সকাল থেকে তাঁকে জেরা করে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, ভুল চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োগের ফলেই তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে! এরপরই, অজিত পাত্র নামে ওই গ্রামীণ চিকিৎসককে দাসপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। রবিবার দুপুরে তাঁকে ঘাটাল মহাকুমা আদালতে তোলা হলে, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে অন্তত চারদিনের হেফাজতে নিতে চান। আদালত অভিযুক্ত চিকিৎসককে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখেই রহস্যের উদঘাটন করতে চাইছে পুলিশ। ঘটনাটিকে ঘিরে এলাকার পরিবেশ এখনও থমথমে!