দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর:বাবার মৃত্যুর পর মা তার বিয়ে দিয়ে ‘দায়মুক্ত’ হতে চেয়েছিল! অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে, তা রুখে দিয়েছে। পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছের কাছে হার মেনেছেন মা’ও। আগামী শনিবার (২০ নভেম্বর), ‘আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার দিবস’ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার “বীরাঙ্গনা” (Birangana) পুরস্কারে সম্মানিত করতে চলেছে মেদিনীপুরের রুমা সিং-কে। স্বভাবতই খুশির হাওয়া জেলাজুড়ে! জানা গেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিষড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর ১৫’র রুমা সিং। হত দরিদ্র পরিবার। বাবা বন্দি সিং ছিলেন পেশায় দিনমজুর। বছর তিনেক আগে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে, অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। রুমার ছোট আরও দুটি ভাই রয়েছে। মা চঞ্চলা সিং-ও দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালান। কীভাবে পড়াবেন তিন ছেলে-মেয়েকে! তাই নাবালিকা মেয়েকে পাত্রস্থ করে ‘দায়মুক্ত’ হতে চেয়ছিলেন! তবে, রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রুমা। গোপনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে, নিজের বিয়ে আটকে দিয়েছিল রুমা। তাতেই এখন সে ‘বীরাঙ্গনা’। শুধু মেদিনীপুরের নয়, সারা রাজ্যের।

thebengalpost.net
রুমা সিং :

আগামী ২০ নভেম্বর (শনিবার), ‘আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার দিবস’ এর দিন কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যান দপ্তর’ এর পক্ষ থেকে রুমা’কে ‘বীরাঙ্গনা’ পুরস্কার দেওয়া হবে। ঘটনার কথা স্বীকার করছেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ কুমার দাস। তিনি জানিয়েছেন, “এবার রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যান দপ্তর আমাদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রুমা সিং-কে নির্বাচিত করেছে ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে। ২০ নভেম্বর কলকাতায় তাকে এই সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়া হবে।” রুমা স্থানীয় শিরোমনী বিরসা মুন্ডা হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই বিয়ে! একথা জানার পরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে রুমার। বিয়ে রুখতে উপায় খুঁজে বেড়ায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুলও বন্ধ। ভাবতে থাকে কীভাবে আটকানো যাবে এ বিয়ে? গোপনে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশাসনের সহযোগিতায় বিয়ে আটকে দেয় রুমা। রুমা জানায়, “আমি লেখাপড়া শিখতে চাই। লেখাপড়া শিখে আমি শিক্ষিকা হতে চাই। আমার দুই ভাইকেও লেখাপড়া শেখাতে চাই। বাবা অল্প লেখাপড়া জানতেন। মা একেবারেই লেখাপড়া জানেন না! তাই আমার বিয়ে দিতে চেয়ে পাত্র খুঁজে নিয়েছিলেন। মা’কে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারিনি। আমি তাই প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে বিয়ে আটকাই। প্রশাসনের লোকজন বাড়িতে এসে মা’কে বোঝান। মা এখন বুঝতে পেরেছেন, অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এখন মা আমাকে লেখাপড়া শেখাতে চান।”

thebengalpost.net
মায়ের সাথে রুমা :

তবে, রুমা এও জানায়, “এরকম পুরস্কার পাবো কখনো ভাবিনি। কোনদিন কলকাতাও দেখিনি। শনিবার আমাকে কলকাতায় নিয়ে যাবে বলেছে।” রুমার মা চঞ্চলা সিং অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছেন। তাই, তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন! তবে, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। চঞ্চলা বলেন, “ওর বাবা মারা যাওয়ার পর একটি ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ের ঠিক করি। আমি ভেবেছিলাম কীভাবে লেখাপড়া শেখাবো? বিয়ে দিয়ে দিলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হবো! মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিল না। মেয়ে অফিসারদের বাড়িতে ডেকে আনে। অফিসাররা এসে আমাকে বোঝান। এখন মনে হচ্ছে মেয়ে ঠিক করেছে।” তিনি বলেন, “১৮ বছর হলেও মেয়ের বিয়ে দেবোনা। মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবো। সামান্য বিধবা ভাতা এবং মজুর খেটে সংসার চালাই। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে প্রয়োজনে লোকের কাছে হাত পাতব, তবুও আর ভুল সিদ্ধান্ত নেব না!”

thebengalpost.net
অনেক পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চায় রুমা :

Ruma Singh of Bishara village in Medinipur Sadar block is getting ‘Birangana’ award after getting married. On November 20, International Children’s Rights Day in Kolkata, Ruma will be given the Birangana Award by the Department of Women and Child Development and Social Welfare, Government of West Bengal. District Child Protection Officer Sandeep Kumar Das admitted the incident. “This time, the state government’s Department of Women and Child Development and Social Welfare has selected Ruma Singh from our West Midnapore district as ‘Birangana’. She will be awarded this bravery on November 20 in Kolkata,” she said. It is learned that after the death of Baba Bandi Singh, his mother was going to free him by marrying him. She has two more brothers. Mother Chanchala Singh was struggling to make ends meet with those three. But Ruma, an eighth-grade student at the local Shiromani Birsa Munda High School, resisted. Ruma secretly contacted the local panchayat member and with the help of the administration stopped the marriage. Ruma’s current age is fifteen years. Ruma said, “I want to learn to read. I want to learn to read and become a teacher. I also want to teach my two brothers to read. My father knew very little. My mother did not know how to read at all. So she was looking for a pot. So I stopped the marriage with the help of the administration. The people of the administration came home and explained it to my mother. My mother now understands that it is not right to marry my daughter at a young age. Now my mother wants to teach me to read and write. ”
Ruma Singh :