দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ মে: ছোট থেকেই লড়াই করে বড় হয়েছে সজল। তার জন্মের পর পরই বাবা শম্ভুরঞ্জন মাসান্ত-র ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। একদিকে কৃষক পরিবারের অর্থাভাব, অন্যদিকে সংসারের মেরুদন্ডের উপরই এলো চরম আঘাত! তবুও, লড়াই ছাড়েননি শম্ভুরঞ্জন। এখনও নিয়মিত চেক-আপ করাতে যেতে হয় মুম্বইয়ের বিখ্যাত একটি ক্যান্সার হাসপাতালে। স্বামীর পাশে থেকে সবসময়ই তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন স্ত্রী পিঙ্কু মাসান্তও। অসুস্থ স্বামীর সেবাশুশ্রুষা, ছেলেকে মানুষ করা থেকে সংসারের সবদিক সামলানো একটা সময় সবকিছু একা হাতেই সামলেছেন পিঙ্কু দেবী। বাবা-মা’র কাছ থেকেই লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছে সজল। ছোট থেকেই অবশ্য সে মেধাবী। ভালো ছবিও আঁকে। গোবরু সংলগ্ন গোদাপিয়াশাল এমজিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘গর্ব’ সজল এবার মাধ্যমিকে ৯৩.৭ শতাংশ (প্রায় ৯৪ শতাংশ) নম্বর পেয়ে পরিবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অঙ্কে ৯৪, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৯৭, ভূগোলে ৯৭ সহ মোট ৬৫৬ নম্বর পেয়েছে সজল। সজলের আফসোস, “বাংলা (৮৫), ইংরেজি (৯১)-তে আর একটু বেশি আশা করেছিলাম!”
মূলত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্যেই সজল এই সাফল্য পেয়েছে বলে জানান তাঁর বাবা-মা। তাঁরা বলেন, “প্রতিটি বিষয়ের জন্য আমরা আলাদা করে গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। বাড়ির কাছেই একটি কোচিং সেন্টারে পড়তে যেত। আর ওর স্কুলের শিক্ষকরা খুব সাহায্য করেছেন। স্যারদের অবদান সত্যিই ভোলার নয়।” বাবা-মা’র ইচ্ছে ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হোক। সজল চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে! সজল বলে, “বাবা-মা চান আমি ডাক্তার হই। কিন্তু, নিট পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেই খরচ কি আমার বাবা-মা চালাতে পারবেন?” সবে মাধ্যমিক পাস করলেও, সজল জানে, কিভাবে কষ্ট করে তাদের সংসার চলে। মাতৃ দিবসের বিকেলে সে জানায়, সামান্য কিছু জমি চাষ করে তাদের সংসার চলে। দীর্ঘ চিকিৎসায় বাবা আগের তুলনায় কিছুটা সুস্থ হলেও, এখনও অনেকটাই দুর্বল। তেমন পরিশ্রম করতে পারেন না! মা-কেই সবদিক সামলাতে হয়। সঙ্গে স্বামীর সেবাশুশ্রুষা তো আছেই। তাই সজল চায়, দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মা’র মুখে হাসি ফোটাতে। প্রতিবেশীদের মধ্যে রমাপ্রসাদ মাসান্ত, মধুসূদন মাসান্ত, শিবাজী কুন্ডু প্রমুখ বলেন, “সজল আমাদের গ্রামের গর্ব। খুব ভদ্র ও মেধাবী ছেলে। অত্যন্ত কষ্টেসিষ্টে ওদের সংসার চলে। আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর পাকা বাড়ির অর্ধেকটা হয়েছে। সামান্য কিছু জমি আছে। সজলের বাবা শম্ভুরঞ্জন ক্যান্সার আক্রান্ত। তবে, অসুস্থ শরীরেও এখন কষ্ট করে চাষবাস করার চেষ্টা করে। কি আর করবে, সংসারটাতো চালাতে হবে!”
সজল জানায়, “মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষকরা খুব সাহায্য করেছেন। আগামীদিনেও তাঁরা পাশে থাকবেন বলেছেন। বিশেষত আমাদের ভূগোলের শিক্ষক মণিকাঞ্চন বাবু সবরকমভাবে সহযোগিতা করেছেন।” স্কুলের শিক্ষক মণিকাঞ্চন রায় ছাড়াও স্বপন কুন্ডু, অরুণ দাস প্রমুখ বলেন, “সজল আমাদের গর্ব। শান্ত, ভদ্র ও মেধাবী। ওর বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। ছোট থেকেই ও লড়াই করে বড় হচ্ছে। একটু সাহায্য-সহযোগিতা পেলে ও অনেক দূর যেতে পারবে।” পড়াশোনা ছাড়াও সজল খুব ভালো ছবি আঁকে বলে জানান তাঁরা। ব্লকস্তরীয় প্রতিযোগিতায় একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে। যদিও, দরিদ্র পরিবারের সন্তান সজলের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা! বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূপাল প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, “বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের স্কুলেই ভর্তি হয়েছে সজল। ও ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। আমরা যথাসাধ্য পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। সেইসঙ্গে সহৃদয় মানুষজনও চাইলে ওর পাশে দাঁড়াতে পারেন।”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: গবাদি পশু (মহিষ) খুঁজতে বেরিয়ে দলছুট দাঁতালের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পঞ্চায়েত…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জুন: গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ জুন: ছুটিতেও ছুটি নেই তাঁর। গত কয়েকদিন ধরে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মে: আদালতের নির্দেশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে আক্রান্ত…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মে: সরকারিভাবে জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিললো।…