তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুলাই: শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক তথা নারী নবজাগরণের অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। সেই জেলাতেই নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে গড়ে উঠেছিল বালিকা বিদ্যালয়। কালক্রমে তা সরকারের অনুমোদন-ও পায়। তবে, এখন বিদ্যালয়ে নেই কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা! গত এক বছর ধরে ক্লাস নিচ্ছেন গ্রুপ-ডি কর্মী। এমনই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দাসপুর থানার অন্তর্গত আনন্দময়ী জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের। আশেপাশে ছিলোনা কোনো বালিকা বিদ্যালয়। তাই, এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৮১ সালে স্থাপিত হয় এই বালিকা বিদ্যালয়। ২০১২ সালে সরকারিভাবে সেই স্কুল অনুমোদন-ও পায়। শতাধিক ছাত্রী নিয়ে শুরু হয় স্কুলের পঠনপাঠন প্রক্রিয়া। ছাত্রী অনুপাতে ছিলেন শিক্ষিকাও। তারপর একে একে শিক্ষিকারা অবসর গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা’র অকাল-মৃত্যুতে একেবারে শিক্ষিকা-শূন্য হয়ে পড়ে এই স্কুল! তারপর থেকে আর শিক্ষক বা শিক্ষিকা নিয়োগ হয়নি। বিদ্যালয়ের একমাত্র স্থায়ী গ্রুপ-ডি কর্মীকেই পড়ানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে! তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য, বাধ্য হয়ে পরিচালন কমিটি সহ সকলের প্রচেষ্টায় অতি সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একজন অস্থায়ী শিক্ষিকাকে নিয়োগ করা হয়েছে।
গ্রামবাসীদের অত্যন্ত আবেগের এই স্কুল। কারণ, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্কুল নির্মাণ করেছিলেন তাঁরা। সেই স্কুল-ই এখন শিক্ষকের অভাবে উঠে যেতে বসেছে! স্কুলের প্রাচীরে জ্বলজ্বল করছে নারী শিক্ষার অগ্রদূত তথা বীরসিংহের ‘সিংহ শিশু’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবি। লেখা রয়েছে একাধিক বাণী। সেই বিদ্যাসাগরের নিজের এলাকায় নারীশিক্ষার এই হাল! ছাত্রী সংখ্যা কমতে কমতে ১৫-তে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। যেভাবে হোক স্কুল টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন মহলে তদ্বির করেছেন তাঁরা। কাজ হয়নি। এই মুহূর্তে স্কুলে এক জন মাত্র স্থায়ী গ্রুপ ডি কর্মী আছেন। তাঁকেই পড়ানোর দায়িত্ব-ও সামলাতে হচ্ছে। ওই গ্রুপ-ডি কর্মী সহ স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে একজন অস্থায়ী শিক্ষিকাকে সম্প্রতি নিযুক্ত করা হয়েছে ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তবে, স্থায়ী শিক্ষিকা না থাকায়, শতাধিক ছাত্রী থেকে তা কমতে কমতে বর্তমানে ১৫ জন ছাত্রীতে দাঁড়িয়েছে! এই বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সহ-শিক্ষা অধিকারিক (এডিআই) মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি সঠিক। পুরো বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হবে।”