দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, সমীরণ ঘোষ, ৭ মার্চ: কংগ্রেসী রাজনীতির সেই চিরাচরিত বিভাজন, মতপার্থক্য মেলাতে পারেনি নেতাজি আর মহাত্মা’কেই। আর, এ যুগের নেতারা তো কোন ছার! স্বভাবতই, সেই ‘ছোঁয়াচে রোগ’ সঞ্চারিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শরীর জুড়েও। একেবারে ওপর থেকে নীচ অবধি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের তৃণমূলী রাজনীতিতেও এখন সেই ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপ! আর, এই মুহূর্তে ‘করোনা’র থেকেও দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে সেই সংক্রমণ। অনেক নেতা-নেত্রীই তাই সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে নাকে মুখে ‘মাস্ক’ পরে ঘরে বসে থাকছেন! কেউ কেউ বাইরে বেরোলেও দূরত্ব বজায় রাখছেন। অনেকেই আবার ‘থোড়াই কেয়ার’ করে সাহসী হয়েছেন। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে (২ মার্চ) পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল। দু’একদিনের মধ্যেই হবে বোর্ড গঠনের কাজ। তার মাঝখানে রবিবার (৬ মার্চ), মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর পৌরসভার বিজয়ী প্রার্থীদের অর্থাৎ নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল! মেদিনীপুর শহরের জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে ডাক দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। খড়্গপুর ও মেদিনীপুরের নব নির্বাচিত ৪০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সবমিলিয়ে ‘সাহস’ দেখিয়েছিলেন ১৭ জন। এর মধ্যে, মেদিনীপুরের ১২ জন এবং খড়্গপুরের ৫ জন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল প্রত্যেককেই। খড়্গপুরের বাকিরা অবশ্য নানা কাজের বিষয়ে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন জেলা সভাপতিকে। তবে, ‘প্রশ্ন’ উঠছে মেদিনীপুরের বাকি ৮ জনকে নিয়ে!
রাজনৈতিক মহল বলছে, বাকি ৮ জনের অবস্থা এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ র মতোই! কিন্তু, এখানে কে ‘শ্যাম’, আর কেই বা ‘কুল’? সেই উত্তরও দিয়ে রাখছে শহরের রাজনীতি-শিক্ষিত (বা, সচেতন) জনগণ। তাঁদের মতে, শ্যাম এখানে এক ‘সেলিব্রেটি’ বিধায়ক; আর ‘কুল’ নিঃসন্দেহে জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও চেয়ারম্যান সহ রাজ্য, জেলা ও শহরের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতা। স্বভাবতই, ‘গোষ্ঠী’ সংক্রমণের এই আবহে, রবিবারের সংবর্ধনা সভায় নাকি দেখা যায়নি, মেদিনীপুর পৌরসভার ১, ২, ৪, ৭, ১৫, ১৬, ১৮ এবং ২৩ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের। তবে, এসেছিলেন বাকি ১২ জন অর্থাৎ ৫, ৬, ৮, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৭, ১৯, ২০, ২২, ২৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। এর মধ্যে আবার একজন ‘অভিজ্ঞ’ কাউন্সিলর নাকি বেশিক্ষণ থাকার ঝুঁকি নেননি! এসেছেন সৌজন্য বিনিময় করেছেন, বিদায় নিয়েছেন। বাকি, ১১ জন অবশ্য বসেছেন, স্মারক নিয়েছেন, ছবি তুলেছেন, বক্তব্য শুনেছেন, খেয়েদেয়ে তারপর গেছেন। আর, এই সংবর্ধনা সভা ও আলাপচারিতা- বৈঠকে সাংবাদিকদেরও ‘ডাক’ দেওয়া হয়নি; স্বভাবতই দিনের শেষে বিভিন্নভাবে খবর সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও বিষয়টি’র মধ্যে এতো জটিলতা বা গোপনীয়তা কিছুই দেখছেনা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস! জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “সোমবার (৭ মার্চ) থেকে বিধানসভার অধিবেশন, তাই দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায় সহ অন্যান্য বিধায়কদের পাওয়া যাবেনা। তাই তড়িঘড়ি দুই শহরের নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ডাকা হয়েছে। তবে, তাড়াহুড়ো করে হলেও, আমরা প্রত্যেককেই সসম্মানে আহ্বান জানিয়েছি। খড়্গপুরের কিছুজন কাউন্সিলর অবশ্য তখনই নানা অসুবিধার কথা জানিয়েছিলেন। বাকিরাও হয়তো নানা অসুবিধার কারণে আসতে পারেননি!” এনিয়ে, গোষ্ঠী-কোন্দল উড়িয়ে সুজয় জানিয়েছেন, “জেলা অফিসের প্রকাশ্য প্রাঙ্গণে রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ, বিধায়ক ও জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট, মুখপাত্র সুকুমার পড়্যা, জেলা নেতা হিমাদ্রি খান, প্রাক্তন বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী, কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ, মহিলা সভাপতি কল্পনা শেঠি- প্রমুখদের উপস্থিতিতে নব নির্বাচিতদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে, গোপনীয়তার কোন বিষয়ই নেই।” যদিও, রাজনৈতিক মহলের ‘মন’ এত সহজে ভুলবার নয়! ৮ মার্চ চেয়ারম্যান বা পুরপ্রধানের নাম ঘোষিত হতে পারে রাজ্য থেকে। তার আগে, নানা জটিল অঙ্ক আর কঠিন সব ‘প্রশ্ন’ এর উত্তর খুঁজছেন রাজনীতি সচেতন মেদিনীপুর শহরবাসী। তবে, জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সব ‘প্রশ্ন’ এর উত্তর দিয়েছেন কবিগুরু’র বাণীতেই, “অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো!”