দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ অক্টোবর: বৃষ্টি উপেক্ষা করেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে অনুষ্ঠিত হল ‘রাবণ দহন’ বা ‘রাবণ বধ’ বা ‘দশেরা’ উৎসব। বুধবার (৫ অক্টোবর), মহা দশমীর সন্ধ্যায় অশুভ শক্তির বিনাশ রূপক ঐতিহ্যমণ্ডিত এই অনুষ্ঠান পালিত হল মহা সাড়ম্বরে। তবে, জেলার মধ্যে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরের ‘রাবণ দহন’ বা ‘রাবণ বধ’ ঘিরেই সর্বাধিক উৎসাহ ছিল বরাবরের মতো। লক্ষাধিক উৎসাহী জনতার সমাগমে ‘রাবণ দহন’ অনুষ্ঠান আয়োজিত হল খড়গপুর শহরের নিউ সেটেলমেন্ট স্থিত রাবণ ময়দানে। দশেরা উৎসব কমিটি আয়োজিত অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির সূচনা রূপী এই অনুষ্ঠান দেখতে এদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রায় ৪৫ ফুটের রাবণ তৈরি করা হয়েছিল এবার। ‘অশুভ শক্তি’ রূপী রাবণের মূর্তিতে ‘অগ্নিবাণ’ (অগ্নি সংযোগ) ছোঁড়েন জেলাশাসক আয়েশা রানী। উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, বিধায়ক অজিত মাইতি প্রমুখ। জেলাশাসক বলেন, “প্রতীকী এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির জয়গান গাওয়া হয়। দশেরা উৎসব কমিটি আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঘিরে জেলাবাসীর উৎসাহ থাকে। ঐতিহ্যমণ্ডিত এই অনুষ্ঠান এবারও নির্বিঘ্নে পালিত হয়েছে।” মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া বলেন, “সারা দেশের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে সব থেকে ভালো এবং সুন্দর রাবণ এইখানেই হয়; যা দেখতে শুধু এ রাজ্য নয়, বাইরের রাজ্য থেকেও উৎসাহী লোকজন আসেন।” খড়্গপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান তথা দশেরা উৎসব কমিটির সভাপতি প্রদীপ সরকার জানান, “প্রায় লক্ষাধিক মানুষ শুভ শক্তির সূচনা এবং অশুভ শক্তির বিনাশ দেখতে খড়্গপুরে রামন ময়দানে হাজির হয়েছিলেন। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। উৎসব কমিটির প্রত্যেক সদস্য এই ক’দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন।”
অন্যদিকে, জেলার অন্যান্য প্রান্তেও তুমুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই ‘রাবণ বধ’ বা ‘রাবণ দহন’ অনুষ্ঠান। মেদিনীপুর সদর ব্লকের এনায়েতপুর থেকে জঙ্গলমহল শালবনীর পিড়াকাটা, সাতপাটি, শালবনী, গোবরু প্রভৃতি এলাকায় অনুষ্ঠিত হল ‘রাবণ বধ’। আতশবাজির রোশনাই তথা অশুভ শক্তির বিনাশ রূপী রাবণ দহন দেখতে হাজার হাজার উৎসাহী জনতা ভিড় জমিয়েছিলেন। জঙ্গলমহল পিড়াকাটায় গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে এই ‘রাবণ বধ’ অনুষ্ঠান। বুধবার সন্ধ্যাতেও মহা সাড়ম্বরে সেই ‘রাবণ বধ’ বা ‘রাবণ দহন’ (স্থানীয় ভাষায়, ‘রাবণ পোড়া’) অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠান দেখতে। পিড়াকাটা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির আয়োজনে তথা পিড়াকাটা এলাকার আপামর বাসিন্দাদের সহায়তায় এই রাবণ বধ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টের তরফে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। আকর্ষণীয় আলোক বাজির প্রদর্শনী হাজার হাজার দর্শককে মুগ্ধ করলেও, শেষ মুহূর্তে ‘অসুর’ রূপী বৃষ্টি হাজির হয়ে ‘রাক্ষসরাজ’ রাবণের দেহে অগ্নিসংযোগে বাধা দেয়! যদিও, শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠান শেষ হয়।