Health

সঙ্কটজনক রোগীকে ভর্তি নেওয়া হলোনা ৩ ঘন্টা, কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু! মেদিনীপুরে বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ সেপ্টেম্বর: নিজে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন INTTUC’র সদস্য, ছেলে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য; তা সত্ত্বেও ‘সঙ্কটজনক’ অবস্থায় হাসপাতালের বাইরে পড়ে থাকলেন ঘন্টার পর ঘন্টা! এরপর, ছেলেকে রীতিমতো প্রভাব খাটিয়ে ফাঁকা থাকা ICCU -তে ভর্তি করতে হল। কিন্তু, ততক্ষণে সব শেষ। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৫ থেকে ৪৫- এ নেমে গিয়েছে! মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা বছর ৫৪’র অরুণ রাণা’র। ছেলে সৌরভ রাণা এলাকার একজন সমাজকর্মী এবং মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবে পরিচিত। মেদিনীপুর শহরের ধর্মার কাছে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করলেন, “আমার বাবা এই হাসপাতালেরই রোগী ছিলেন। ১৫ দিন চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ছুটি দিয়েছিলেন, একপ্রকার জোর করেই। বলেছিলেন বাড়িতে থাকলেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে। শুক্রবার রাত থেকে বাড়াবাড়ি হতে, শনিবার সকালেই নিয়ে এসেছিলাম। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড শুনেই না বলে দিয়েছিলেন, তারপর টাকা দিয়েই চিকিৎসা করাব বললেও, সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত পড়ে থাকলেন হাসপাতালের বাইরে! অক্সিজেন স্যাচুরেশন যখন ৪৫ এ নেমে গেল, আমার জোরাজুরিতে ভর্তি নিলেন। আধঘন্টার মধ্যেই সব শেষ! বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন বাবা।” যদিও, কর্তৃপক্ষের দাবি, “ওনার অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল, আমরা বলেছিলাম, আমাদের এখানে সম্ভব নয়, সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভালো হয়। কিন্তু, ওনার ছেলে এখানেই ভর্তি নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন। শেষমেশ আমরা বন্ডে সই করিয়ে ভর্তি নিই!”

এই হাসপাতালের বিরুদ্ধেই অভিযোগ :

মেদিনীপুর শহরে ফের বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে শনিবার দুপুরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হল, মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে ধর্মা ও মোহনপুর ব্রিজ সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা মৃত অরুণ রাণা’র ছেলে সৌরভ রাণার অভিযোগ, তাঁর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু, কলকাতায় চিকিৎসা করানোর পর অনেকটাই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর, ফুসফুসে সংক্রমণ হলে, দু’বার কোভিড টেস্টের পরও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। প্রথমে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। তারপর ১৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন শহরের উপকণ্ঠে ওই বেসরকারি হাসপাতালে। গত দু’দিন আগে (বৃহস্পতিবার) কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন, নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই। শুক্রবার রাত্রি ১১ টার পর থেকে অক্সিজেন লেবেল কমতে শুরু করায় শনিবার সকালে ফের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসেন। অভিযোগ, শনিবার সকালে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় রোগীকে ভর্তি না নিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় তিন ঘন্টা ফেলে রাখা হয়। এরপর ক্রমশই রোগীর অক্সিজেন লেবেল কমতে কমতে ৪৫ এ গিয়ে দাঁড়ালে, রোগীর পারিবারের চাপে ICCU তে ভর্তি নেওয়া হয়। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় অরুণ রাণা নামে বছর ৫৪ এর ওই ব্যক্তির। মৃতের ছেলে সহ পারিবারের অন্যান্য সদস্য, এমনকি হাসপাতালে থাকা অন্যান্য রোগীদের পারিবারের সদস্যরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহায়তা ও অব্যবস্থার বিরুদ্ধে! মারাত্মক অভিযোগ করা হয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড শুনলে প্রথমে রোগী ভর্তি নিতে অস্বীকার করা হয়! যদিও এই হাসপাতলে বড় বড় করে লেখা, “এখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিষেবা দেওয়া হয়।” এরপর, হাসপাতালের কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় কোতোয়ালী থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কোতোয়ালী থানার পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই, বিষয়টি মৌখিক আকারে কোতোয়ালী থানায় জানিয়েছেন মৃতের ছেলে সৌরভ। তবে, শেষকৃত্য সম্পন্নের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সৌরভ। তিনি এও জানিয়েছেন, বিষয়টি রাজ্যের মন্ত্রী তথা তাঁদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ শ্রীকান্ত মাহাতো’র কানেও পৌঁছেছে। জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তাকেও। এতসবের পরেও প্রশ্ন উঠছে, শাসকদলের কর্মীর ক্ষেত্রে যদি এরকম হয়, সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কি হবে! অন্যদিকে, ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে শিলাদিত্য মন্ডল জানান, “রোগীর পরিবার পরিজনদের অভিযোগ ঠিক নয়। ওনারা রোগী নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে জানিয়ে দিয়েছিলাম, এখানে এই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়, অন্যত্র নিয়ে চলে যেতে। কিন্তু, ওনারা নিজেদের দায়িত্বে রোগী ভর্তি করেছিলেন। তাছাড়া, গত ৭০ দিন ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে ওনার চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু, সেভাবে রিকভারি হয়নি। তাই, আমাদের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, এখানে আর সম্ভব নয়, অন্যত্র কোথাও নিয়ে যেতে। আর, এখন হাসপাতালের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন!” লিখিত অভিযোগ করা হলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা।

মৃত্যু হল অরুণ রাণা’র :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: এবার শিক্ষা দপ্তরে বদলির নির্দেশিকা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে নতুন DI হচ্ছেন অমিত রায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: এবার শিক্ষা দপ্তরের একঝাঁক আধিকারিকের বদলির নির্দেশিকা…

5 days ago

SP Transfer: পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি হচ্ছেন পলাশচন্দ্র ঢালি, পূর্ব মেদিনীপুর নিয়ে জল্পনা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: SIR আবহের মাঝেই রাজ্যের প্রায় ১০টি জেলার…

5 days ago

Medinipur: খড়্গপুর টাউন থানার আইসি হচ্ছেন পার্থসারথি পাল; বদলি হলেন কেশিয়াড়ি, মোহনপুর, গোয়ালতোড় থানার IC-রাও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: রাজ্যজুড়ে ১৭৫ জন ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হলো।…

6 days ago

Midnapore: মেয়ের অন্নপ্রাশন শেষে জ্বর নিয়েই কাজে যোগ দিয়েছিলেন, ‘কফিনবন্দী’ হয়ে ডেবরায় ফিরলেন CRPF জওয়ান

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: শোকসংবাদটা পৌঁছেছিল শুক্রবারই। বুকে পাথর চেপে অপেক্ষা…

1 week ago

Medinipur: মামিমার সাথে ‘অভিসারে’ গিয়ে ফাঁসলেন যুবক? অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে কেশিয়াড়িতে গ্রেপ্তার ‘কলির কেষ্ট’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মামিমাকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক।…

1 week ago

Medinipur: প্রায় ৬০ বছর পর রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রীর গড়ে ‘পাকা’ হবে মাটির স্কুলবাড়ি, আনন্দে মিষ্টিমুখ পড়ুয়াদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার 'খাসতালুক' সবংয়ে…

2 weeks ago