Institution

School: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-ই ভরসা! পশ্চিম মেদিনীপুরের উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বাঁচাতে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগের দাবি এলাকাবাসীর

তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুলাই: শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে পশ্চিম মেদিনীপুরের উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় (বা, জুনিয়র হাই স্কুল)। পড়ুয়াদের একমাত্র ভরসা এখন গ্রামেরই এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক! অবিলম্বে তাই শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যালয় বাঁচানোর আর্জি জানালেন এলাকাবাসী। ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের বরকতিপুর উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় বা জুনিয়র হাই স্কুলের। বিদ্যালয় ভবন আছে। আছেন রাঁধুনি বা মিড-ডে মিল সহায়িকারাও। প্রতিদিন মিড-ডে মিলও হয়। তবে, নেই শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা! আর, শিক্ষকের অভাবে দিন দিন কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে শিক্ষকের ভূমিকায় গ্রামেরই এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনোজ ভূঁইয়া।

উল্লেখ্য যে, রাজ্য ও জেলা জুড়ে এরকম কয়েকশো উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে, যে বিদ্যালয় গুলিকে একসময় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে, বর্তমানে শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয় গুলি প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। এমনটাই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। ঘাটালের মনসুকা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দীর্ঘগ্রাম বরকতিপুর জুনিয়র হাইস্কুলের অবস্থাও অনেকটা তেমনই। ২০১৬ সালে সরকারি অনুমোদন পেয়ে এই স্কুলের পথচলা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত এই স্কুলে শুরুর দিকে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশ ভালোই ছিল বলে জানা যায়। ২৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল একসময়। তবে, শুরু থেকেই ৪ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে চলতো পঠনপাঠন। বর্তমানে, সেই সংখ্যাটাও কমে দাঁড়িয়েছে একজনে। তিনিও বয়স জনিত কারণে সবদিন স্কুলে আসতে পারেননা! এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষকের অভাবে অনেক অভিভাবকই তাঁদের ছেলে মেয়েদের এই স্কুল থেকে সরিয়ে অন্যত্র ভর্তি করেছেন। এর জেরে, বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা খাতায় কলমে ৬৬ জন হলেও, নিয়মিত আসে মাত্র ৩০-৩৫ জন। বলা চলে যে, স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায়, স্কুল প্রায় বন্ধের মুখে! এই পরিস্থিতিতে এলাকারই এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনোজ ভূঁইয়া ভালোবেসে স্কুলে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বেতন বা ভাতার আশা না করেই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। শুধু মনোজবাবু নন স্কুলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তাঁর স্ত্রীও নাকি স্কুলে আসেন পড়ুয়াদের ক্লাস নিতে। এমনটাই জানিয়েছেন মনোজ ভূঁইয়া। স্কুলের পড়ুয়ারাও এখন মনোজ বাবু-কেই তাঁদের ‘প্রধান শিক্ষক’ এর চোখে দেখে!

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনোজ ভূঁইয়া-ই ভরসা:

এদিকে, দ্বিতল ভবন, আলো, পাখা পানীয় জল, শৌচাগার থেকে সমস্ত পরিকাঠামো রয়েছে এই বরকতিপুর জুনিয়র হাইস্কুলে। রয়েছে নিয়মিত মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাও। এজন্য ৩ জন মিড-ডে মিলের রাঁধুনি বা সহায়িকা রয়েছেন। তবে, নেই শুধু স্থায়ী শিক্ষক। এভাবে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে কতটা অগ্রগতি হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরা। এখন তো, একটা ক্লাস রুমেই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিতে দেখা যায় অস্থায়ী শিক্ষক মনোজ ভূঁইয়াকে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক-অভিভাবিকা থেকে রাধুনিরা- সকলেই বলছেন, শিক্ষক না থাকায় স্কুলটা বন্ধের মুখে! তাদের দাবি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। বরকতিপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ঠিক পাশেই রয়েছে বরকতিপুর আংশিক বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই স্কুলের শিক্ষক নিখিলেশ কর। বরকতিপুর জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষকের অভাব প্রসঙ্গে তিনিও বলেন, অবিলম্বে এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হোক, নাহলে স্কুলটি বন্ধ হয়ে পড়বে। স্কুল চালু হওয়ার ৬ বছর পরও কেনো স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না এই স্কুলে? সূত্রের খবর, শিক্ষা দপ্তর একসময় ঢালাও এমন অনেক স্কুলের অনুমোদন দিলেও, এখনও এইসব স্কুলগুলি নাকি শিক্ষা দপ্তরের শিক্ষা পোর্টালের অন্তর্ভুক্ত-ই হয়নি। যার জেরেই এই ধরনের সমস্যা। এই বিষয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (DI/ District Inspector)-কে ফোন করলে তিনি শুধু এটুকুই জানান যে, “বরকতিপুরের শিক্ষক সমস্যা নিয়ে আমি রিপোর্ট পাঠিয়েছি।” এখন দেখার, কবে এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক আসে! নাকি, তার আগেই পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়ে যায় এই স্কুল!

বরকতিপুর জুনিয়র হাই স্কুল বা উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়:

News Desk

Recent Posts

Recruitment Scam: ‘একযাত্রায় পৃথক ফল! আমাদের কি পরিবার নেই?’, প্রাথমিকের রায়ের পরই গর্জে উঠলেন SSC-র ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ডিসেম্বর: ৩ এপ্রিলের পর ৩ ডিসেম্বর। এ রাজ্যের…

12 hours ago

Midnapore: এবার শিক্ষা দপ্তরে বদলির নির্দেশিকা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে নতুন DI হচ্ছেন অমিত রায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: এবার শিক্ষা দপ্তরের একঝাঁক আধিকারিকের বদলির নির্দেশিকা…

7 days ago

SP Transfer: পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি হচ্ছেন পলাশচন্দ্র ঢালি, পূর্ব মেদিনীপুর নিয়ে জল্পনা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: SIR আবহের মাঝেই রাজ্যের প্রায় ১০টি জেলার…

1 week ago

Medinipur: খড়্গপুর টাউন থানার আইসি হচ্ছেন পার্থসারথি পাল; বদলি হলেন কেশিয়াড়ি, মোহনপুর, গোয়ালতোড় থানার IC-রাও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: রাজ্যজুড়ে ১৭৫ জন ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হলো।…

1 week ago

Midnapore: মেয়ের অন্নপ্রাশন শেষে জ্বর নিয়েই কাজে যোগ দিয়েছিলেন, ‘কফিনবন্দী’ হয়ে ডেবরায় ফিরলেন CRPF জওয়ান

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: শোকসংবাদটা পৌঁছেছিল শুক্রবারই। বুকে পাথর চেপে অপেক্ষা…

2 weeks ago

Medinipur: মামিমার সাথে ‘অভিসারে’ গিয়ে ফাঁসলেন যুবক? অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে কেশিয়াড়িতে গ্রেপ্তার ‘কলির কেষ্ট’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মামিমাকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক।…

2 weeks ago