দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ৯ অক্টোবর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর শহরের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার বাসিন্দা, পেশায় রেলকর্মী রাজু সিং-এর মৃত্যুর বছরখানেক পর তাঁর চাকরি পেয়েছিলেন সাবালিকা মেয়ে (কন্যা) লিজা কুমারী (সিং)। ছেলে মনোজিৎ সিং নাবালক (১০ বছর) হওয়ায়, মেয়ে লিজাই (২০ বছর) আইন মেনে সদ্য চাকরিতে যোগদান করেছিল। শুধু তাই নয়, রাজু সিং-এর পরিবারের তরফে তাঁর স্ত্রী দিজিয়া সিং বেশ কয়েক লক্ষ টাকাও পেয়েছিলেন। নাবালক ভাই ভবিষ্যতে ‘সাবালক’ হয়ে যাতে তাঁর চাকরির পথে কোনও অসুবিধা সৃষ্টি না করতে পারে এবং ভাইকে যাতে টাকার ভাগ দিতে না হয়; সেজন্য নিজের প্রেমিক সোনু কুমারকে সঙ্গে নিয়ে গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মনোজিৎ-কে নির্মমভাবে হত্যা করে বলে অভিযোগ। শনিবার দু’জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার আদালত তাদের ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এর মধ্যেই, বুধবার ভোর ৩টা ৩৫ মিনিটে সোনু কুমার ভার্মার ‘রহস্যমৃত্যু’ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জানা যায়, বছর ২৪’র সোনু কুমার ভার্মা বুধবার ভোর ৩টা ৩৫ মিনিটে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হেফাজতে (পুলিশ হেফাজতে) থাকাকালীন মঙ্গলবার রাতে সোনু অসুস্থতা বোধ করে। এরপরই তাকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খড়গপুর টাউন থানার পুলিশের তরফে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। যদিও, খড়্গপুর শহরের ভগবানপুর এলাকার বাসিন্দা সোনু’র বাবা-মা’র অভিযোগ, তাঁদের ছেলেকে পুলিশ পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। সোনু’র কোনও রোগজ্বালা ছিলোনা বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। সোনু’র মা বেলা ভার্মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ছেলের কোন রোগ জ্বালা ছিল না। ওকে মিথ্যে কেসে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছে। তারপর নির্মমভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে পুলিশ। আমার সব শেষ হয়ে গেল!” ঘটনার দিন সোনু নিজের বাড়িতে ছিল বলেও দাবি করেছেন বেলা ভার্মা। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রেল শহরে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বছরখানেক আগে মৃত্যু হয় নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার বাসিন্দা রাজু সিং-এর। রাজু ছিলেন পেশায় রেলকর্মী। মাসখানেক আগেই তাঁর সেই চাকরি পেয়েছে তাঁর মেয়ে লিজা কুমারী (সিং)। এদিকে, গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মৃত রাজু সিং-এর স্ত্রী দিজিয়া দেবী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর টাউন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে অভিযোগ করেন, তাঁর ১০ বছরের নাবালক ছেলে (মনোজিৎ)-কে বিকেল (শুক্রবার বিকেল) থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা! এরপরই, পুলিশের তরফে তদন্ত ও তল্লাশি শুরু করা হয়। তল্লাশি চলাকালীন শনিবার দুপুরে দিজিয়াদের কোয়ার্টারের উল্টো দিকের পরিত্যক্ত একটি কোয়ার্টার থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করেন পুলিশকর্তারা। এরপর, ভাঙাচোরা সেই পরিত্যক্ত কোয়ার্টার থেকেই মনোজিতের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই সন্ধ্যা নাগাদ পুলিশি জেরার মুখে মৃত মনোজিতের দিদি লিজা স্বীকার করে নেয় প্রেমিক সোনু কুমার ভার্মার সঙ্গে যোগসাজস করে ভাইকে খুন করার কথা। এরপরই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। বুধবার ভোরে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সোনু’র রহস্যমৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে! জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, সোনু’র অ্যাজমা বা হাঁফানি জাতীয় রোগ ছিল। নিয়মিত ওষুধ খেতে হত। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়াতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর বেলা মৃত্যু হয়। ঘটনায় SDPO বা মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের (ধীরজ ঠাকুরের) নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা। পুলিশ এও জানিয়েছে, “বাবা-মা’র অভিযোগ কথাটাই স্বাভাবিক। কারণ তাঁদের সন্তানের এভাবে মৃত্যু হয়েছে! কিন্তু, সোনু যেহেতু সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাতে ছিল, সেক্ষেত্রে পুরো বিষয়টাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।” আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ময়নাতদন্ত হলেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।