দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ জুন: ওড়িশার জলেশ্বরের একটি সোনা দোকান থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনা চুরি করে পালাতে গিয়ে পুলিশের জালে মেদিনীপুর শহরের এক বিজেপি যুব মোর্চার নেতা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত ওই যুব মোর্চার নেতার নাম সোমনাথ সাহু। বাড়ি মেদিনীপুর শহরের হবিবপুর এলাকায়। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বিজেপি-কে তীব্র কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। অপরদিকে, ওই নেতার সঙ্গে এখন আর দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দায় এড়িয়েছে বিজেপি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আনুমানিক দেড়টা নাগাদ জলেশ্বরের একটি সোনা দোকানে একটি কালো রংয়ের স্করপিওতে করে এসে পৌঁছন এক যুবক। এরপর, বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার দেখতে দেখতে, দোকানের কর্মীদের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনা হাতিয়ে নিজের স্করপিওতে উঠে চম্পট দেন ওই যুবক। দ্রুত অন্য গাড়িতে করে ওই যুবককে পিছু ধাওয়া করেন ওই দোকানের কর্মী সহ স্থানীয়রা। জলেশ্বর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে লক্ষণনাথ রোড সংলগ্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে অভিযুক্ত যুবকের স্করপিওটি আটকে যায়। এরপর স্থানীয়রা ওই স্করপিওটিকে আটক করে গাড়ির ভেতরে থাকা যুবককে পাকড়াও করেন। তারপরই অভিযুক্ত যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ওই যুবককে গ্রেফতার করে জলেশ্বর থানার পুলিশ। সেইসঙ্গে অভিযুক্তের স্করপিও গাড়ির নম্বর এবং ধৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জলেশ্বর থানার পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরে। শুক্রবার ওড়িশা পুলিশের মাধ্যমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কাছেও এই খবর এসে পৌঁছয় বলে শনিবার জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। সেই সূত্রে এও জানা গেছে, ধৃত যুবকের বাড়ি মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরে। একসময় সোনার কারিগর হিসেবে মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজার এলাকায় কাজ করতেন। সেইসঙ্গে বিজেপি যুব মোর্চার সক্রিয় কর্মী হিসেবেও পরিচিত। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে যুব মোর্চার জেলা কমিটির সম্পাদক হিসেবেও আছেন। ধৃত যুবকের সঙ্গে বিজেপির সমস্ত তাবড় নেতাদের ছবি পাওয়া গেছে ফেসবুকে। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরই বিজেপি-কে তীব্র কটাক্ষ করেছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা। তিনি বলেন, “বিজেপি-র নেতা মানেই তো নারী পাচার, ড্রাগ পাচার, সোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত। কোন ভদ্রলোক বিজেপি করে না। আর এই জেলাতে এখন বিজেপির কোন অস্তিত্বও নেই! যে ক’জন বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, খতিয়ে দেখলে তাদের সকলেরই এই ধরনের চরিত্র বেরিয়ে পড়বে।” পাল্টা বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “প্রথমত ওই যুবক একসময় বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এটা ঠিক। কিন্তু, গত প্রায় দেড় বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে ওর কোন যোগাযোগ নেই। নতুন জেলা কমিটি হয়নি বলেই ওর নামটা হয়তো থেকে গেছে। আর খুনি-ধর্ষকদের দল তৃণমূলের মুখেই সমস্ত কথা মানায় না! ওদের ছাত্র নেতা ওদের দলেরই ছাত্র নেত্রীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ করে। ওদের ছোঁড়া বোমাতে ১১ বছরের নাবালিকার মৃত্যু হয়!”
অন্যদিকে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই টুইট করে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তিনি লিখেছেন, “মেদিনীপুরের হবিবপুরের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা সোমনাথ সাহু ওড়িশার একটি দোকান থেকে ২৫ লক্ষ টাকার গয়না চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে তার চুরির দৃশ্য আছে। সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলে এবং পুলিশে দেয়…এর স্ত্রী এক নম্বর ওয়ার্ডে (মেদিনীপুর পুরসভার) বিজেপির প্রার্থী ছিল।” বিজেপি-কে কটাক্ষ করে টুইট করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (AITC)-ও।