দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ এপ্রিল: গত ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে শালবনীতে দু’টি ৮০০ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিলেন সজ্জন জিন্দাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “শালবনীতে আমরা ১৬ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে দু’টি ৮০০ মেগা ওয়াটের (মোট ১৬০০ মেগাওয়াট) পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করব।” শালবনীতে জিন্দালদের সিমেন্ট কারখানা হওয়ার পরও যে বিপুল পরিমাণ জমি পড়ে আছে, সেখানেই এই পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ে উঠবে বলে প্রশাসন এবং JSW কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়। এবার সেই পাওয়ার প্ল্যান্টেরই শিলান্যাস করতে আসছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচির তারিখের বিষয়ে এখনও সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে, শালবনীতে অবস্থিত JSW সিমেন্ট কারখানার HR আধিকারিক দিব্যেন্দু মুখার্জি জানিয়েছেন, “২১ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে আসতে পারেন। যদিও, তারিখটি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে, ওইদিনই মুখ্যমন্ত্রী আসবেন ধরে বুধবার থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে।”

thebengalpost.net
জিন্দলদের পাওয়ার প্ল্যান্টের শিলান্যাস খুব শীঘ্রই:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

অপরদিকে, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২১ এপ্রিল দুপুরে জিন্দালদের কারখানার শিলান্যাসের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করবেন। ২২ এপ্রিল মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে বা কলেজ কলেজিয়েট মাঠে প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং এবং সাধারণ মানুষের হাতে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা তুলে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এই বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী জানিয়েছেন, “এখনও সবকিছু নিশ্চিত হয়নি।” একই কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারও। তবে, পুলিশ ও জিন্দল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে জিন্দল কারখানার ভেতরে এএসএল বা অ্যাডভান্স সিকিউরিটি লিঁয়াজো (advance security liaison) সম্পন্ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর জিন্দালদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে, ওই দিনই ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয়। শুরু হয় মাওবাদীদের আন্দোলন। জিন্দালরা ইস্পাত কারখানার পরিকল্পনা বাতিল করে। তার পর দেড় দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত। ইস্পাত কারখানার বদলে সিমেন্ট কারখানা গড়ার প্রস্তুতি নেয় জিন্দালেরা। ২০১৮ সালে সেই কারখানার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, ইস্পাত কারখানা তৈরি করতে ৪ হাজারের বেশি একর জমি জিন্দালদের দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ৮৪৯ একর জায়গায় সিমেন্ট কারখানা তৈরি হয়েছে। বাকি জমি খালি পড়ে রয়েছে। শালবনি ব্লকের কুলফেনি, জামবেদিয়া, আসনাশুলি, নতুনডিহি, কাশিজোড়া, বর্জু-সহ প্রায় ৩০টি গ্রামের কয়েকশো জমিদাতা রয়েছেন। কাশিজোড়ার আসনাশুলি এলাকার বাসিন্দা আদিত্য মাহাতো, কুলফেনির অসিত মাহাতো থেকে জমিদাতাদের সংগঠনের নেতা পরিষ্কার বলেন, “সেই ২০০৮ সাল থেকেই তো আমরা আশায় বসে আছি। আমাদের শুধু প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হচ্ছে। জমি দিয়েছিলাম (২০০৮ সালে) ইস্পাত কারখানা হবে বলে। ১০ বছর পর হলো একটা সিমেন্ট কারখানা। হাজার হাজার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্মসংস্থান হলো মাত্র ৫০০-৬০০ জনের। চাকরি প্রাপকদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা মেরেকেটে ২০০-২৫০ জন! ফের একবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। শুনছি মুখ্যমন্ত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টের শিলান্যাস করতে আসছেন। দেখা যাক!”

thebengalpost.net
মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: