দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ অক্টোবর: নারীশক্তির জয়গানের মধ্য দিয়েই মাতৃশক্তির বন্দনা, দেবী দুর্গার আরাধনা! মেদিনীপুর শহরের পুজো কার্নিভাল বা বিসর্জনের বিশেষ শোভাযাত্রাতে নজর কাড়ল পুলিশ লাইন হাউসিং দুর্গাপূজা কমিটির ‘শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’ থিম। বিজ্ঞান, সাহিত্য, গবেষণা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, বিচার ব্যবস্থা- সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জয়জয়কার তথা উল্লেখযোগ্য অবদানকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন জেলা পুলিশ লাইনের দুর্গাপুজো কমিটি। যে কমিটির মাথায় স্বয়ং পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) পিনাকী দত্ত। সোমবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মেদিনীপুর শহরের পুজো কার্নিভাল বা বিসর্জনের বিশেষ শোভাযাত্রাতে পুলিশ লাইন হাউসিং দুর্গাপূজা কমিটির এই থিম মন জয় করে সকলের। উল্লেখ্য যে, মেদিনীপুর শহরের ১৫টি পুজো কমিটিকে মেদিনীপুর শহরের গোলকুঁয়াচক-বটতলাচক রাস্তায় পৌরসভা ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই কার্নিভাল তথা বিসর্জনের বিশেষ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত্রি প্রায় সাড়ে ১০টা অবধি চলে এই অনুষ্ঠান।

thebengalpost.net
পুলিশ লাইনের ট্যাবলো:

thebengalpost.net
রবীন্দ্রনগরের শোভাযাত্রা:

কার্নিভালে যে ১৫টি কমিটি অংশ নেয়, সেগুলি হল- কোতোয়ালী বাজার, অশোকনগর, রবীন্দ্রনগর, পুলিশ লাইন হাউসিং, রাঙামাটি, পাটনাবাজার আদি অকালবোধন, চিড়িমারসাই হীরক সমিতি, বিবিগঞ্জ, কর্নেলগোলা চিরসাথী, রাজাবাজার, ধর্মা, নজরগঞ্জ সমাজবাড়ি, সুজাগঞ্জ সর্বজনীন, মীরবাজার পার্লামেন্ট এবং স্কুলবাজার সর্বজনীন (ধর্মশালা মাঠে)। রবীন্দ্রনগর সর্বজনীন তাঁদের পুজো থিমের মতোই কার্নিভালেও তুলে ধরে ‘উৎসর্গ’ থিম। মন্ডপশিল্পী, মৃৎশিল্পী, আলোক শিল্পী, শব্দ শিল্পী থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন এবং মিডিয়ার প্রতি তাঁদের পুজো উৎসর্গ করেছেন রবীন্দ্রনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। রাঙামাটি সর্বজনীনের পুজোর থিম ছিল- ‘আলোকস্পর্শে দেবী দশভুজা’। কার্নিভালের থিমে রাঙামাটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছেন বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা তথা শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটা এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রতি। কর্ণেলগোলা চিরসাথী ক্লাবের কার্নিভালের থিমও ছিল বেশ নজরকাড়া। ডেঙ্গু, রক্তদান, বৃক্ষরোপণের মতো সমাজ সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়েছে ট্যাবলোর মাধ্যমে। অশোকনগরের ‘ভূতুড়ে বাড়ি’ মণ্ডপের মতোই কার্নিভালের শোভাযাত্রাও ছিল আকর্ষণীয়।

thebengalpost.net
অশোকনগর মন্ডপের ভূত-প্রেতের দল কার্নিভালেও:

এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, বেশিরভাগ পুজো কমিটিই এবার তাঁদের শোভাযাত্রাতে আদিবাসী নৃত্য, ছৌ নৃত্য প্রভৃতি লোকশিল্প ও সংস্কৃতির উপর নির্ভর করেছেন। এছাড়াও, নানাভাবে নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে নিজেদের থিম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। সুসজ্জিত শোভাযাত্রাতেও রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্প তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বিচারক এবং অতিথিদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন একাধিক পুজো কমিটি। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি হাজার হাজার দর্শকের সমাগম হয়েছিল এই পুজো কার্নিভাল উপভোগ করার জন্য। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন ও সেচ দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী, জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, সাংসদ জুন মালিয়া, বিধায়ক দীনেন রায়, পৌরপ্রধান সৌমেন খান প্রমুখ। একদিকে কার্নিভাল; অন্যদিকে জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন, আন্দোলন। এনিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “আন্দোলন আন্দোলনের জায়গায় থাকবে। কিন্তু, মা দুর্গার বোধন, বন্দনা আর তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যাওয়া আর আসবে না! মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ঠ সহনশীলতা দেখিয়েছেন। আমি একজন ডাক্তার হিসেবে বলছি, এবার জুনিয়র চিকিৎসকদেরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ।”

thebengalpost.net
রবীন্দ্রনগরের থিম উৎসর্গ:

thebengalpost.net
জেলা পুলিশের গ্রীন উইনার্স: