দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ ফেব্রুয়ারি: “আমি তোমার হাত ধরে একটা বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম…সেটা মনে হয় আর এ জীবনে সম্পূর্ণ হলোনা! একটা বাবা-মা মরা ছেলের মাথায় যে কত টেনশন তুমি বুঝলেনা…আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আর তোমাকেই ভালোবাসবো। আমার হাতটা ছেড়ে দিলে। আর হয়তো অমি থাকবো না…যখন তুমি আমার এই চিঠিটা পাবে!” এমনই মর্মস্পর্শী চিঠি (বা, সুইসাইড নোট) লিখে গত ৪ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের অশোকনগরের যুবক অভিজিৎ মজুমদার। পরিবারের তরফে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি)। অবশেষে আজ, বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টো নাগাদ বছর ৩০-র ওই যুবকের দেহ উদ্ধার হল অশোকনগর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ডের কাছে অবস্থিত একটি নির্মীয়মান ১১ তলা ফ্ল্যাটের নীচ থেকে। উদ্ধার হয়েছে যুবকের বাইকটিও। পকেট থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রেমিকার সঙ্গে অভিজিতের একটি ছবিও। অন্যদাকে, ওই ফ্ল্যাটের সামনে থেকে (ঢোকার মুখে) অভিজিতের জুতো এবং বাড়ি থেকে সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে মৃত যুবকের প্রেমিকাকে আটক করেছে পুলিশ। একপ্রকার পচা-গলা দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে।

thebengalpost.net
ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য এলাকায়:

এদিকে যুবকের পরিবারের অভিযোগ, প্রেমিকার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। প্রেমিকার বাড়ি অন্যত্র (লালগড়) হলেও, পড়াশোনার জন্য থাকতেন মেদিনীপুর শহরের অশোকনগরের একটি মেসে। আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন অভিজিৎ-ই। কয়েকমাস আগে আইনি বিয়েও (রেজিস্ট্রি ম্যারেজ) করেছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি সেই প্রেমিকাই অভিজিতের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলেন বা শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সেই দুঃখ-কষ্ট সহ্য না করতে পেরেই অভিজিৎ আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি। আবার অভিজিতের আত্মীয়দের কেউ কেউ বলছেন, “সম্প্রতি অভিজিতের প্রেমিকা নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। এদিকে অনেক টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নিয়েছিলেন অভিজিতের কাছ থেকে। আর তারপর নতুন প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুন করেছেন অভিজিৎ-কে।”

thebengalpost.net
প্রেমিকাকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরের পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন বি.টেক পাস যুবক অভিজিৎ মজুমদার। ফোন বন্ধ ছিল। অভিজিতের বাবা-মা (নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার ও নমিতা মজুমদার) দু’জনই মারা গিয়েছেন। ভাই প্রসেনজিৎ মজুমদার এবং তাঁর বন্ধুরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর চালিয়েও না পেয়ে, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ (নিখোঁজ ডায়েরি) দায়ের করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল প্রেমিকাকেও। তবে তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের অভিযোগ। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানার পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ১১ তলা ওই নির্মীয়মান ফ্ল্যাটের ঠিক পাশ (একটি অসম্পূর্ণ সেফটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে) থেকেই। এলাকার বাসিন্দা তথা অভিজিতের আত্মীয় মানিক দাসের অভিযোগ, “ওই প্রেমিকা তার অন্য এক বন্ধুকে (নতুন প্রেমিককে) সাথে নিয়েই অভিজিৎ-কে খুন করেছে।” ঘটনা ঘিরে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন! ইতিমধ্যে, তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রেমিকাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

thebengalpost.net
অভিজিৎ মজুমদার (ছবি পরিবার সূত্রে প্রাপ্ত):