দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মার্চ: গত কয়েকদিনের তুলনায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগোলেও শুক্রবার নতুন করে আরও ৩ জন জন্ডিস (হেপাটাইটিস-এ) আক্রান্তের খোঁজ মিললো মেদিনীপুর শহরে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও মেদিনীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ৩ জনই মেদিনীপুর শহরের ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গতকাল (বৃহস্পতিবার) শহরের ২২নং ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লী এলাকায় ২৪ জন জন্ডিস (হেপাটাইটিস-এ) আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। ওই এলাকার আরও ১৯ জনের শরীরে জন্ডিসের (চোখ হলুদ, বমি, পায়খানা বা পেটখারাপের) উপসর্গ পাওয়া গিয়েছে। ওই ১৯ জন সহ মেদিনীপুর শহরের ২০, ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডের মোট ১৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে এদিন বিকেলে জানিয়েছেন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান। এদিন বিকেলে তিনি এও জানান, “আজ (শুক্রবার) নতুন করে ৩ জন জন্ডিস আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জন্ডিস আক্রান্ত এবং উপসর্গযুক্ত সকলেই ভালো আছেন। পুরসভা, স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনের তরফে সমস্ত ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।” অপরদিকে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে শুক্রবার বিকেলে জানা গেছে, ২০, ২১ ও ২২নং ওয়ার্ড থেকে যে জলের নমুনা সংগৃহীত হয়েছিল, তারমধ্যে ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডের মোট ৯১টি পরিবারের জলের নমুনাতে পাওয়া গিয়েছে ক্ষতিকারক (পেটখারাপের জন্য দায়ী) কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া (Coliform Bacteria)।

thebengalpost.net
সমস্যা জলেই:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এর আগে শুক্রবার সকালে জন্ডিস উপদ্রুত ২২নং ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লী এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের হাতে ওআরএস, হ্যালোজেন ট্যাবলেট প্রভৃতি তুলে দেন মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা। দুপুর নাগাদ সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)-র ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এলাকা পরিদর্শনে যান। প্রতিনিধিদলের এক সদস্য (ডঃ প্রিয়াঙ্কা) জানান, “যে সোর্স থেকে রোগ ছড়াচ্ছিল, তা চিহ্নিত করা গেছে। পৌরসভার তরফে ওই সাবমার্সিবল ইতিমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আক্রান্তরাও আগের তুলনায় ভালো আছেন।” তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান, ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী হাজরা প্রমুখ। শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ২৪ জন হেপাটাইটিস-এ আক্রান্তের খোঁজ মেলে। ২০, ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে সমীক্ষা করে যাঁদের নমুনা টেস্ট করতে পাঠানো হয়, তাঁদের মধ্যে ৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে আজ (শুক্রবার)। অপরদিকে, ২২নং ওয়ার্ডের ওই ‘হটস্পট’ এলাকার (সুকান্তপল্লীর) ২১টি এবং পাশের এলাকার ৩৮টি পরিবারের জলের নমুনাতে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া (Coliform Bacteria) পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও, ২১নং ওয়ার্ডের ৩২টি পরিবারের জলের নমুনাতেও এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গিয়েছে।

চিকিৎসক ডাঃ প্রবোধ পঞ্চ্যধ্যয়ী জানান, “এই ব্যাকটেরিয়া থেকে ডায়রিয়া, আন্ত্রিক সহ পেটখারাপ হতে পারে। অপরদিকে, জন্ডিস (হেপাটাইটিস-এ) ও একটি জলবাহিত রোগ। দূষিত জল, খাবার-দাবার, অপরিচ্ছন্ন হাত থেকে এই রোগ ছড়ায়। তাই, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবার আগে প্রয়োজন।” কিন্তু, ওই এলাকার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া এলো কি করে? এই বিষয়ে জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, “কোনোভাবে ওই জলে মল, মূত্র, আবর্জনা; মানে বর্জ্য পদার্থ বা নোংরা-আবর্জনা মিশেছে।” জানা যায়, ২২নং ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লীতে অবস্থিত ওই সাবমার্সিবলের কাছেই নিকাশি নালা ও শৌচাগার আছে। মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা বলেন, “আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে শহরে আর না হয়, সেজন্য স্বাস্থ্য দপ্তর, পুরসভা ও প্রশাসন একযোগে কাজ করছে।”

thebengalpost.net
এলাকায় বিধায়ক সুজয় হাজরা: