মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জানুয়ারি: “পাগলিটাও মা হয়েছে…বাবা হয়নি কেউ!” কবির এই লাইনগুলিই বড্ড বাস্তব হয়ে ওঠে শুভ্র-র মতো কতশত নিষ্পাপ শিশুর জীবনে! হ্যাঁ, জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের শুভ্র। মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো এক মায়ের কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিল ঠিকই, তবে জীবনে ছিলোনা স্বীকৃতির ‘আলো’! জেলা শহর মেদিনীপুরের রাঙামাটিতে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনেই (সরকারি হোমে) লালিত-পালিত হয়েছে সে। ৩ বছর ২ মাস বয়সী ছোট্ট সেই শুভ্র-ই এবার পাড়ি দেবে ইতালির মিলানে। সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনে তাকে দত্তক নিয়েছেন ইতালির অ্যালবার্তো রিবনি (Alberto Riboni) এবং এলিজাবেতা ফেকো (Elisabetta Facco)। আইনি ‘স্বীকৃতি’ মেনেই জঙ্গলমহলের শুভ্র’র বাবা-মা এখন থেকে অ্যালবার্তো আর এলিজাবেতা। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পবিত্র মকর সংক্রান্তির দিন সকালে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী সমস্ত নিয়ম মেনে শুভ্র-কে তুলে দিলেন অ্যালবার্তো-এলিজাবেতা’র হাতে।
শিশু ‘দত্তক’ নেওয়ার অনুমোদিত আন্তর্জাতিক সংস্থা-র মধ্যস্থতায় (আফা) এবং ভারত সরকারের সমস্ত নিয়মকানুন ও আইন মেনে এই সহৃদয় দম্পতি মেদিনীপুরের শুভ্র-কে দত্তক নিয়েছেন। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পবিত্র মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তির দিন জেলাশাসকের কার্যালয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি ৩ বছর ২ মাসের শুভ্র সরেন-কে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অ্যালবার্তো রিবনি এবং ক্রিয়েটিভ ভিডিও মেকার এলিজাবেতা ফেকো-র হাতে তুলে দিলেন। জেলাশাসক বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া মেনেই ওঁরা দত্তক নিয়েছেন। এক বেলজিয়ামের দম্পতিও আমাদের হোমের এক শিশুকে দত্তক নিতে চেয়েছেন। সেই প্রক্রিয়াও চলছে।” উল্লেখ্য যে, ইতালির দম্পতি অ্যালবার্তো-এলিজাবেতা’র বছর সাতেকের এক মেয়েও আছে। তাকেও তাঁরা ইতালি থেকে দত্তক নিয়েছেন বলে জানা যায়। এবার ঘরে এলো ‘শুভ্র’ সুন্দর এক ফুটফুটে ছেলে। খুশি অ্যালবার্তো-এলিজাবেতা। খুশি মধ্যস্থতাকারী সংস্থার কর্মী সারা আন্দ্রেই-ও। তিনি বলেন, “দেখুন ওরা কত খুশি! সমস্ত ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শুভ্র-কে ওঁরা নিজেদের ছেলে হিসেবে দত্তক নিয়েছেন।” তিনি এও জানান, “নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর এই বিষয়ে (শুভ্র-র বিষয়ে) ওঁরা রিপোর্টও পাঠাবেন।”
জানা যায়, শুভ্র-র জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা সবকিছুই মেদিনীপুরের এই হোমে (বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে)। নামটিও দিয়েছেন হোমের আধিকারিকরা। শুভ্র-র মা মানসিক ভারসাম্যহীন। নাবালিকা অবস্থায় শুভ্র-কে জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। ১৮ বছর হওয়ার পরই তাঁকে পাঠানো হয়েছে অন্য একটি হোমে। আর, শুভ্র বেড়ে উঠছিল মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন তথা সরকারি শিশু দত্তক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানেই। অবশেষে, স্বীকৃতি আর অপত্য স্নেহ; দুই-ই পেল জঙ্গলমহলের সন্তান শুভ্র। তার বাকি জীবন এবার বাস্তব অর্থেই ‘শুভ্র-সুন্দর’ হয়ে উঠবে- আশাবাদী জেলাশাসক থেকে আপামর মেদিনীপুরবাসী!