দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ মে: বুধবার (১০ মে) বিকেলে ধেয়ে আসা কালবৈশাখীর ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে সাময়িকভাবে স্বস্তি মিলেছিল! জেলা শহর মেদিনীপুর ও আশেপাশের এলাকায় খুব সময়ের জন্য হলেও ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব দেখা যায়। এর মধ্যেই, মেদিনীপুর শহরে বেশ কিছু বড় বড় গাছ বা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। তবে, সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সদর মেদিনীপুরের জগন্নাথ মন্দির ও স্কুল বাজারের মাঝামাঝি সঙ্গতবাজার এলাকায়। একটি নির্মীয়মান বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে মাত্র ৪০-৫০ কিলোমিটার (খুব বেশি হলে ৬০ কিলোমিটার) গতিবেগের ঝড়ের তাণ্ডবে! ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন অনেকে।

thebengalpost.net
ভেঙে পড়া অংশ :

তবে, বুধবার বিকেলের এই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ওই বহুতলের ঠিক পাশে থাকা একটি বেসরকারি হোটেলের বেশ কিছু অংশের। একটি বাইকেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের হেরফেরে প্রাণ রক্ষা হয় ওই হোটেলের অন্যতম কর্ণধার চন্দন সেনের স্ত্রী সহ হোটেলের বেশ কয়েকজন অতিথি বা ভাড়াটিয়ার। উল্লেখ্য যে, মেদিনীপুর শহরের স্কুলবাজার থেকে জগন্নাথ মন্দির চক অবধি যাওয়ার রাস্তাটি অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। সেই রাস্তার ঠিক পাশেই (সঙ্গতবাজার এলাকায়, পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক উল্টো দিকে) একটি ৯ তলা (g+8) ফ্ল্যাট বা আবাসন নির্মিত হচ্ছে। সরকারি নিয়মকানুন না মেনেই এই আবাসন নির্মিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিবেশীরা। নির্মীয়মান আবাসনের ঠিক পাশেই থাকা বেসরকারি হোটেল বা লজের অন্যতম কর্ণধার চন্দন সেনের অভিযোগ, “যখন ওরা ওই আবাসন নির্মাণ করার বিষয়ে প্রতিবেশী হিসেবে আমার সাথে কথা বলেন, তখন জানান ৬ তলা (g+5) আবাসন হবে। আমি কোন আপত্তি করিনি, বরং যথেষ্ট সহযোগিতা করেছি। এখন দেখছি ৯ তলা আবাসন হচ্ছে। আরও ১ তলা বাড়ানো হবে বলে শুনছি। মাত্র ৩ কাঠা জায়গার উপর কিভাবে ৯-১০ তলা আবাসনের অনুমতি পায়? তাছাড়াও, আমার হোটেল আর আবাসনের মাঝে যতটা জায়গা ছাড়ার কথা ছিল, তা ছাড়া হয়নি। ভবিষ্যতে যদি আরো কোন বড় বিপদ হয় কে বাঁচাবে? আগুন লাগালে দমকল কর্মীরা উপরে উঠবেন কিভাবে? মাত্র ২ ফুট জায়গা ছাড়া হয়েছে। আজ আমার স্ত্রী সহ হোটেলের অতিথিদের অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা হয়েছে। আমি এই ঘটনায় ওই ফ্ল্যাট নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে FIR করব কোতোয়ালী থানায়।”

ওই এলাকারই অর্থাৎ ১৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র অরূপ দাস। ঘটনার খবর পেয়েই বুধবার বিকেলে ছুটে যান তিনি। এই ধরনের বেআইনি কাজ কর্মের জন্য তিনি মেদিনীপুর পৌরসভার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনেন। তাঁর অভিযোগ, “গোটা শহর জুড়ে এভাবেই কোন নিয়ম-কানুনের পরোয়া না করেই বহুতল গড়ে উঠছে। মেদিনীপুর পৌরসভা এবং শাসক দলের মদতেই এইসব কাণ্ডকারখানা চলছে। এর পেছনে প্রচুর টাকার খেলা আছে। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে! আজ ওই বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়েছে পাশের হোটেলের ছাদে এবং হোটেলের নিচে। তাতেই মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু, ওই অংশ যদি ভেঙে রাস্তার উপরে পড়তো, তাহলে কি হতো? কত মানুষের প্রাণ যেত।” তাঁর আরও অভিযোগ, “টাকা খেয়ে একবার অনুমোদন দিয়ে দেওয়ার পর, পৌরসভার আর কোনো নজরদারি নেই! কিভাবে এই সব বহুতল নির্মিত হচ্ছে, কি মালপত্র বা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে, সেসব দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ শহরবাসীকে। বিজেপি এর বিরুদ্ধে আগেও আন্দোলন করেছে, ভবিষ্যতে আরো বড় আন্দোলন করা হবে।” এই ঘটনায় মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানিয়েছেন, বিষয়টি অবিলম্বে খতিয়ে দেখা হবে।

thebengalpost.net
নির্মাণ সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন‌ ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলের মালিক চন্দন সেন :