দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ আগস্ট: কেউ ১ লক্ষ খুইয়েছেন তো কেউ ১০ লক্ষ! কারুর কারেন্ট অ্যাকাউন্ট তো কারুর সেভিংস, কারুর আবার ফিক্সড ডিপোজিট। কারুর জীবনের গচ্ছিত ‘আমানত’, কারুর আবার ব্যবসায়িক মূলধন। সব গেছে! বলা ভালো, যাঁর ভরসায় রেখেছিলেন, সেই নিয়ে পালিয়ে গেছে। দাঁতনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের (সিএসপি-র) সেই ‘গুণধর’ পরিচালক রাজীব মাইতিকেই হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। পুলিশের খাতায় এখনও ‘নিখোঁজ’ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের মালিয়াড়ার বাসিন্দা তথা সিএসপি-র পরিচালক (বা, মালিক) রাজীব। এদিকে, সর্বস্ব খুইয়ে হাহাকার করছেন অন্তত ২০-৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার গ্রাহক। দুশ্চিন্তায় কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও দাবি বাসিন্দাদের। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ‘শুকনো’ আশ্বাসে আর ভরসা খুঁজে না পেয়ে, সোমবার দিনভর ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের ‘আটক’ করে রাখেন প্রতারিত গ্রাহকরা।

thebengalpost.net
সেই সিএসপি বা গ্রাহক সেবা কেন্দ্র:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি তাঁদের আটক করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও, পুলিশের তরফে দফায় দফায় গ্রাহকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল থেকেই দাঁতনের কাকরাজিত এলাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই গ্রাহক সেবা কেন্দ্র বা কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টের ‘ঝাঁপ’ বন্ধ। ওইদিন থেকেই ছেলে ‘নিখোঁজ’ দাবি করে শুক্রবার (৮ আগস্ট) দাঁতন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন রাজীবের বাবা বিনয় মাইতি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শুক্রবার রাজীবকে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার একটি সোনা দোকানে সোনা কিনতে দেখা গেছে। তারপর থেকে রাজীবের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করা যায়নি বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। এদিকে, শুক্রবার থেকেই ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন প্রতারিতরা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে গ্রাহকদের বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও, ভরসা রাখতে পারছেন না তাঁরা। তাই সোমবার দুপুরে প্রতারিত গ্রাহকদের কাছ থেকে ডকুমেন্টস বা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা কাকরাজিত এলাকায় পৌঁছলে, তাঁদের স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির ঘরে আটক করে রাখেন গ্রাহকরা।

দুলাল চন্দ্র জানা নামে প্রতারিত এক গ্রাহক বলেন, “অন্তত ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের সর্বস্ব খুইয়েছেন। কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে রাজীব মাইতি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বলছেন, দেখছি। কিন্তু, আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। দুশ্চিন্তায় আমাদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম উঠে গেছে। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছে। স্যালাইন চলছে। অনেকে আবার আত্মহত্যা করার জন্য হাতে বিষ নিয়ে বসে আছে!” তাঁদের একটাই দাবি, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই। গ্রাহকদের হাতে ‘বন্দী’ অবস্থাতেই ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ফিল্ড সুপারভাইজার রাজু মন্ডল সোমবার বিকেল নাগাদ বলেন, “আমরা শুক্রবার থেকেই গ্রাহকদের কাছ থেকে তাঁদের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছি। তারপরই আমরা তাঁদের টাকা ফেরানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।” এই বিষয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে রাজীব মাইতির নামে এফআইআর করা হবে বলেও সোমবার ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “নিখোঁজ রাজীবের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

thebengalpost.net
বন্দী করা হলো ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের: