Natural Disaster

“ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের টাকা না দিয়ে মেদিনীপুর বাসীকে পচিয়ে মারতে চাইছে বিজেপি সরকার”, রাজ্যের সব মন্ত্রীর এক সুর

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ আগস্ট: সোমবার ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করার পর রাজ্যের এই অভিজ্ঞ ক্যাবিনেট মন্ত্রী জানালেন, “বীভৎস পরিস্থিতি। আমি আগেও বন্যা পরিদর্শনে এসেছি। এরকম অবস্থা কখনও দেখিনি। লক্ষ লক্ষ মানুষ জলবন্দি। গ্রামের পর গ্রাম।” তিনি এও স্পষ্ট করে দিলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ছাড়া ঘাটাল বাসীকে প্রতি বছরের এই জলযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হলেও, কেন্দ্রের সমস্ত শর্ত মেনে নিলেও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছেনা!” মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই নৌকাতে চেপে বন্যা পরিদর্শন করলেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, বিধায়ক অজিত মাইতি, দীনেন রায়, মমতা ভূঁইয়া এবং কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। ঘাটাল বাসীকে প্রতি বছরের এই ভয়াবহ “দুর্ভোগ” থেকে উদ্ধার করতে তাঁদেরও একই মত। মঙ্গলবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে সমবেত হয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চার মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া, হুমায়ূন কবীর, শিউলি সাহা ও শ্রীকান্ত মাহাত। সাংবাদিক বৈঠক থেকে জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়া তীব্র ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকার’কে কটাক্ষ করে বললেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সব কিছুই অনুমোদিত হয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় সরকার একটি টাকাও বের করছেনা! প্রথমে কথা ছিল, ৭৫ শতাংশ টাকা দেবে কেন্দ্র সরকার, তাতে রাজি হলেননা, তারপর নিজেরাই বললেন- ৫০ শতাংশ কেন্দ্রের, ৫০ শতাংশ রাজ্যের; রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী তাতেই রাজি হলেন। কিন্তু, কোথায় কি! আজ পর্যন্ত একটি টাকাও বরাদ্দ করলেন না। ঘাটাল বাসী তথা সমগ্র মেদিনীপুর বাসীকে পচিয়ে মারতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার!”

ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি :

পরিদর্শনে রাজ্যের অভিজ্ঞ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় :

উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও, এখনও জলবন্দি মহকুমার লক্ষ লক্ষ মানুষ। দাসপুর, রাজনগর, মনসুখা প্রভৃতি এলাকায় এখনও খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট। নৌকায় করে বাড়ির মেয়েদের-ও একটু পানীয় জলের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় একটু ত্রাণের জন্য মানুষ হাহাকার করছেন। ২ দিন বৃষ্টি না হওয়ায়, মেদিনীপুর সদর মহকুমার কেশপুরের বন্যা পরিস্থিতিরও অনেকটাই উন্নতি হয়েছে; তা সত্ত্বেও খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটের মধ্যে আছেন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা। জেলা ও ব্লক প্রশাসানের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহ বিভিন্ন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে; তবুও গত তিন দশকের মধ্যে সবথেকে ভয়াবহ এই বন্যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাবাসী এখনও মহা সংকটের মধ্যে দিনযাপন করছেন। আর, সেজন্যই ঘুরেফিরে সেই কয়েক দশকের মরীচিকা-সম “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান” এর বিষয়টিই মহা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে! জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া’র মতে- ঘাটাল, কেশপুর, ডেবরা, সবং, পাঁশকুড়া সহ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ৭-৮ টি ব্লক বেঁচে যাবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হলে।

ফের একবার ঘাটাল শহর হয়ে উঠলো ইতালির ভেনিস : শহর

খাদ্য ও পানীয় জলের খোঁজে :

এদিকে, রাজ্য সড়ক থেকে জল কমায় মঙ্গলবার থেকে মেদিনীপুর ও পাঁশকুড়ার সঙ্গে বাস যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে, ঘাটালের ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ও ঘাটাল পুরসভার ১৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২ টি ওয়ার্ডে এখনও জল জমে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব এলাকার ভৌগোলিক আকৃতি অনেকটা গামলার মতো হওয়ায় জল ঢুকলে বেরোতে সময় লাগে। কাজেই, এই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে কিংবা পাকা বাড়ির ছাদে ত্রিপল খাটিয়ে দিন কাটছে। পানীয় জলের সঙ্কট ভয়াবহ, এর মধ্যেই ঘাটাল বিদ্যাসাগর বিদ্যালয়ে পরিশ্রুত পানীয় জলের পাউচ তৈরির মেশিন বসানো হয়েছে। সেখান থেকে দূরের গ্রামগুলিতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে! অত্যন্ত, বেদনাদায়ক যে বন্যার জল ফুটিয়ে খেতেও দেখা গেছে কোথাও কোথাও! দাসপুর – ২ ব্লকে পলাশপাই খালের ওপর থাকা একটি বাঁশের সাঁকো মঙ্গলবার নদীর জলের স্রোতে ভেঙে যায়। দাসপুর -১ ব্লকে সালামপুরে কাঁসাই নদীর জল বেড়ে ৪০ ফুট নদী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখান দিয়ে নদীর জল ঢুকছে। তবে, দুপুরের পর নদীর জলস্তর কিছুটা কমায় স্বস্তি মিলেছে। এর মধ্যেই, সোমবার বিকেলে ঘাটালের দেওয়ানচক গ্রামে জলবন্দি এক আসন্ন প্রসবা মহিলাকে উদ্ধার করে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নিজেদের দায়িত্বে সদা তৎপর।

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজ্যের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া :

একটু জল ও খাদ্যের খোঁজে :

জীবন কাটছে বাড়ির ছাদে :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: শিক্ষা, সাহিত্য, সঙ্গীতের সাথেই মিশে গেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছটা; ঈশ্বরের আলোয় আলোকিত ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’-এর মঞ্চ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ সেপ্টেম্বর: শিক্ষা, সাহিত্য, সঙ্গীত ও সমাজজীবনে উল্লেখযোগ্য অবদানের…

15 hours ago

Midnapore: সকাল থেকেই চলছিল অভিযান, পুজোর আগেই কেশিয়াড়ি থেকে পাকড়াও মহারাষ্ট্রের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই…

2 days ago

IIT Kharagpur: শত চেষ্টাও বিফলে, ন’মাসে ছয় পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু IIT খড়্গপুরে; ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার গবেষকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ সেপ্টেম্বর: ফের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার আইআইটি খড়্গপুরে! শনিবার…

4 days ago

Midnapore: দুর্ভেদ্য নাকা পয়েন্ট, স্টেশন চত্বরে বসছে CCTV; মেদিনীপুরে কুড়মি আন্দোলন ঠেকাতে কড়া জেলা পুলিশ ও রেল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: 'কেউ কথা রাখেনি..!' না রাজ্য সরকার না…

7 days ago

IIT Kharagpur: বিশ্ব উষ্ণায়ন আর মানব সভ্যতার বিবর্তন, বনাঞ্চলে ব্যাহত সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া; IIT খড়্গপুরের গবেষণায় উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: গত কয়েক বছরে সবুজায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে ভারত।…

7 days ago

Midnapore: বাড়ি নয় যেন ‘হাজারদুয়ারি’! কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে সপরিবারে ‘ফেরার’ বেলদার স্বর্ণ ব্যবসায়ী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: বিশাল জায়গার উপর প্রাসাদোপম বাড়ি। উঁচু পাঁচিল…

1 week ago