দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুন: জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি এলাকার নেহাতই খেটেখাওয়া পরিবারের দুই কিশোর। দু’জনেরই বাবা-মা অন্যত্র কাজকর্ম করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতেন তাঁরা। দুই বন্ধু রাহুল ও সন্দীপ সারাদিন একসঙ্গেই থাকত। রবিবার ভোরে তাদেরই মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কেশিয়াড়ি ব্লকের পতিবাঁধ এলাকায়! পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে রাহুলের বাড়িতে দু’জনে একসঙ্গে মাংস-ভাত খায়। তারপরই বছর ১৩-র দুই কিশোর বাড়ির পেছনে একসাথে মদ্যপান করে। তারপর রাহুলের বাড়ির বারান্দায় একসাথেই শুয়ে পড়ে দু’জনে। রবিবার ভোর থেকে শুরু হয় বমি, অসহ্য গলা-বুক জ্বালা এবং শ্বাসকষ্ট। বাড়িতে তখন রাহুলের বছর ১৬-র দিদি ঊষা সিং ছাড়া আর কেউ নেই! সেই প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করে দু’জনকে নিয়ে যায় কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা সন্দীপ-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাহুলকে রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সন্ধ্যা নাগাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কেশিয়াড়ি থানার পুলিশ। ঘটনা ঘিরে নেমে এসেছে জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। উঠছে নানা প্রশ্নও!

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সন্দীপের বাড়ি খড়্গপুর গ্রামীণ থানার ভালুকমাচা এলাকায়। কেশিয়াড়িতে তার মামাবাড়ি। মামার মৃত্যুর পর মামিমা তাঁর সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ায় সন্দীপ আর তার দাদাই মামাবাড়িতে থাকত। সন্দীপের বাবা মহারাষ্ট্রে কাজ করেন। সেখান থেকে অনলাইন মাধ্যমে ছেলেদের টাকা পাঠিয়ে দিতেন বলে জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে। অপরদিকে, রাহুলের বাড়ি কেশিয়াড়ির পতিবাঁধে। তার বাবা-মাও বাইরে কাজ করতেন। বাড়িতে রাহুল আর তার দিদি ঊষা থাকত। সন্দীপ তাদের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটাত। শনিবার সন্ধ্যায় সন্দীপের বাবা টাকা পাঠালে দুই বন্ধু গিয়ে মাংস কিনে আনে। সেইসঙ্গে কিনে নিয়ে একটি বিলিতি মদও। এরপর তারা তিনজন একসাথে মাংস-ভাত খায়। তারপরই মদ্যপান করতে সন্দীপ ও রাহুল বাড়ির পিছনের দিকে চলে যায় বলে জানায় রাহুলের দিদি ঊষা। রবিবার বিকেলে ঊষা এও বলে, “এরপর আমি শুয়ে পড়ি। ওরা অনেক রাতে এসে বারান্দায় শুয়ে পড়ে। ভোরের দিকে আমার ভাই এসে বলে, দিদি বুকে খুব যন্ত্রাণা হচ্ছে। গলা জ্বালা করছে। তার আগে ওরা বমিও করে। সন্দীপ কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলোনা। আমিই পাশের বাড়ির জেঠু সহ লোকজনদের ডেকে আনি। তারপর হাসপাতালে নিয়ে যাই।” হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরই চিকিৎসকেরা সন্দীপকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাহুলকে স্থানান্তরিত করা হয় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। সন্ধ্যা নাগাদ সেখানে তার মৃত্যু হয়।
কেশিয়াড়ির ভারপ্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অর্পণ নায়েক বলেন, “প্রাথমিকভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।” এক্ষেত্রে জেলার স্বাস্থ্য অধিকারিক থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিকরা প্রশ্ন তুলছেন, “নাবালকদের কিভাবে মদ বিক্রি করা হলো? সেই মদে বিষাক্ত কিছু ছিল কি? নাকি নাবালকদের মেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল মদ বিক্রি করেছিলেন দোকানদার?” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি আমরা। সমস্ত বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”