দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২৩ জুন: “ক্রমশ রত্নহারা হচ্ছি আমরা! বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত ‘এনসাক্লোপিডিয়া’ আজহারদা, আজহারউদ্দীন খান গতকাল রাত ১১.৫৫ মিনিটে চলে গেলেন। ক’দিন আগে গেলেন মাস্টারমশাই তথা অপর সাহিত্যসাধক হরিপদ মণ্ডল। তিনি গেলেন প্রায় ৯৯ বছর বয়সে, আজহারদা ৯১। নজরুল গবেষক হিসেবে তাঁর পরিচয় জগৎজোড়া। সাহিত্যে রাজ্য সরকারের নজরুল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। আলগা লেখা লেখেননি কোনো দিনই। পড়েছেন যতো, লিখেছেন তার ভগ্নাংশ। একবার জানিয়েছিলেন, যেখানে আলো ফেলা দরকার ছিল, কিন্তু সেভাবে কেউ নজর দেননি, আমি সেখানেই একটু বাতি জ্বালানোর কাজ করেছি।” মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক বা লাইব্রেরিয়ান থেকে বিখ্যাত লেখক তথা বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া ওয়ে ওঠা আজহারউদ্দীন খানের প্রয়াণে এভাবেই শোক জ্ঞাপন করেছেন গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের নেতৃত্ব তথা সমাজকর্মী বিজয় পাল। অখণ্ড মেদিনীপুরের বরণীয় সাহিত্যিক, দুই বাংলার বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ আজহারউদ্দীন খান গতকাল (২২ জুন, ২০২১) রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে মেদিনীপুর শহরের নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। পেশায় গ্রন্থাগারিক হলেও নেশায় ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক ও একনিষ্ঠ সংগঠক। তাঁর রচিত ‘বাংলা সাহিত্যে নজরুল’, ‘বাংলা সাহিত্যে মোহিতলাল’, ‘বাংলা সাহিত্যে মহম্মদ শহীদুল্লাহ’, ‘বাংলা সাহিত্যে মহম্মদ আব্দুল হাই’, ‘রক্তে রাঙ্গানো দিন’, ‘দীপ্ত আলোর বন্যা’, ‘বঙ্কিমচন্দ্র : অন্য ভাবনায়’, ‘শেকড়ের খোঁজে’, ‘বিদ্যাসাগর স্মরাক গ্রন্থ’ ‘মোহিতলালের পত্র গুচ্ছ’ প্রভৃতি বাংলা সাহিত্যের চিরন্তন সম্পদ। বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সম্বর্ধিত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে দুই বাংলার শিক্ষা-সাংস্কৃতিক জগতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে!

thebengalpost.in
আজহারউদ্দীন খান :

মেদিনীপুর শহরের মীরবাজারে ১৯৩০ সালের ১ লা জানুয়ারী তাঁর জন্ম। সাহিত্য ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের স্নাতক। পেশায় ছিলেন জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক। হয়ে উঠেছিলেন বরণীয় সাহিত্যিক ও গবেষক। নজরুল গবেষণার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ, মোহিতলাল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবেতেই তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। পড়তে পড়তেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বইয়ের পোকা! তাঁকে, বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া বলতেন দুই বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। গত কয়েকবছর ধরে প্রস্টেট ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে মেদিনীপুর শহরের বড়আস্তানায় নিজ বাসভবনে প্রয়াত হলেন। দীর্ঘ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য নেতৃত্ব ছিলেন। আমৃত্যু ছিলেন লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের শাখা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ছিলেন সংগঠনের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সভাপতি। তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলার একাধিক অধ্যাপক, গবেষক তথা শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্বরা। সকলের মুখে একটাই কথা, “যে গ্রন্থাগারের তিনি গ্রন্থাগারিক ছিলেন, সেই গ্রন্থাগার আলো করে তাঁর বই! সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন মেদিনীপুরের গর্ব আজহারউদ্দীন খান।”