Politics

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাজুড়ে “দাদা বদল” এখন সময়ের অপেক্ষা! দুই অনুগামীরা এক হয়ে কড়া নাড়ছেন মুকুল-দরজায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: “পৃথিবীতে স্থির সত্য বলে কিছু নেই, সবকিছুই বিবর্তনশীল সত্য” সেই ঊনবিংশ শতকে বলে গেছেন সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদীরা। একুশের বাংলার রাজনৈতিক অন্দরমহলেও আজ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে একথা! বঙ্গ-রাজনীতির মূল স্রোতের একাধিক নেতা এখন ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ সগর্বে আর সদর্পে উচ্চারণ করে চলেছেন, “রাজনীতিতে সবকিছুই সম্ভব! আজকে তুমি কাছে, কালকে তুমি দূরে…।” জনগনের ‘সেবা’ মূলমন্ত্র হলেও, পায়ের তলার জমিটা তো শক্ত পোক্ত হওয়া দরকার, বলছেন ‘জননেতা’রা! তাই, ‘পদ্মবনে’র পঙ্কিলতা ছেড়ে এখন তাঁরা সবুজে সবুজ ‘ঘাসজমি’তে দাঁড়িয়ে জনগণের সেবা করতে চান। হ্যাঁ, সাহিত্য ছেড়ে রাজনীতির ভাষাতে বললে- ‘ঘাসফুল’ ছেড়ে ‘পদ্ম ফুল’ হাতে তুলে নেওয়া রাজ্য তথা জেলার রাজনৈতিক নেতারা ফের ‘ঘাস ফুল’ তুলে নিতে চাইছেন। আর, এই পথে তাঁরা অনুসরণ করছেন একদা ঘাসফুলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ তথা পদ্ম-বনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করা মুকুল বাবু’কে। তাই, মুকুল দাদা’র অনুগামী আর শুভেন্দু দাদা’র অনুগামী সকলেই আজ একই পথের পথিক! গন্তব্য কাঁচরাপাড়ার ‘কাঁচাপাকা’ দাড়িতে জনপ্রিয় ৬৭ বছরের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদের বাড়ির দরজা। তাঁর হাসিমুখের দর্শন পেলেই যে ফের শাসকদলের নেতা হিসেবে জোড়া ফুলের আগামীদিনের কাণ্ডারী হওয়া যাবে, একথা বুঝে গেছেন সকলেই!

২০২০’র ১৯ শে ডিসেম্বরের শাহী সভায় দাদার অনুগামীরা :

বিভিন্ন জেলাতেই যেমন মুকুল দা’র লোক আছেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও আছেন। সকলেই তাঁকে বাবু দা বা শিবু দা (শিবু পানিগ্রাহী) হিসেবে চেনেন। বর্তমানে, তিনি যদিও বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি, তা সত্বেও ঘনিষ্ঠ মহলে বলতে দ্বিধা বোধ করছেন না, “মুকুল দা’ই তো রাজনৈতিক আদর্শ। তিনি যেখানে থাকবেন নিঃসন্দেহে সেখানেই স্বস্তি বোধ করব।” তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, শুধু তিনি নন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে মুকুল অনুগামী (বর্তমানে, সকলেই বিজেপিতে) হিসেবে পরিচিত গৌতম কৌড়ি, দেবায়ন ঘোষ, দিলীপ পাল, জনমেঞ্জয় খুটিয়া সহ আরও অনেকেই মনোস্থির করে ফেলেছেন জোড়াফুলেই ফিরবেন। এও শোনা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা গেরুয়া পদ্ম পতাকা ছেড়ে তেরঙ্গা জোড়া ফুলের পতাকা হাতে তুলে নেবেন, হয়তো জুলাই মাসেই। আরও, তাৎপর্যপূর্ণ খবর হল, মুকুল দাদা’র হাত ধরেই এবার শুভেন্দু দাদা’র অনুগামীরাও জোড়া ফুলে ফিরতে চলেছেন। এককথায়, জেলার রাজনীতিতে “দাদা বদল” এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা! আর, এই বদলের রাজনীতিতে অন্যতম মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাতে নাকি মেদিনীপুরের শিবু দা’ই আছেন। সেক্ষেত্রে, ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠের শাহী-সভায় পদ্মবনে তথাকথিত “দাদার অনুগামী” দের যে ঢল নেমেছিল, সেই ঢল এবার হয়তো ২১ শে জুলাইয়ের ধর্মতলার শহীদ সভায় নামতে চলেছে! যদিও, ফোন ধরলেও শিবু পানিগ্রাহী বললেন, “যা হচ্ছে সবটাইতো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, যা হবে সেটাও দেখতে পাবেন। এটুকু বলতে পারি, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনৈতিক ময়দানে নেমেছি। সেই ময়দান ছেড়ে পালাবো না। রাজনৈতিক ময়দানে থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাব।”

মুকুল রায়ের সঙ্গে শিবু পানিগ্রাহী (ফাইল ছবি) :

অপরদিকে, “দাদার অনুগামী” (শুভেন্দু অধিকারী’র অনুগামী) হিসেবে পরিচিত জেলা রাজনীতির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা (এখনও সকলে বিজেপিতেই আছেন) প্রণব বসু, অমূল্য মাইতি, রমাপ্রসাদ গিরি, স্নেহাশিস ভৌমিক, দুলাল মন্ডল, কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, আকাশদীপ সিংহ প্রমুখদের বক্তব্য কি? কয়েকজন ফোন ধরেছেন, কয়েকজন ধরেননি, কয়েকজন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানিয়েও দিয়েছেন। জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ কাবেরী চট্টোপাধ্যায় যেমন একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “মুকুল দা’র সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তো উত্তরা সিংহের হয়ে প্রচারও করেছি।” দুলাল মন্ডল জানিয়েছেন, “মন থেকে বিজেপি করতে পারিনি।” আর, জেলা পরিষদের প্রাক্তন (বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইস্তফা দেওয়া) খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি ফোন ধরলেও এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি! তবে, কথায় কথায় বেরিয়ে এলো তাঁর সেই পুরানো ক্ষোভ, “আমি তো তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলাম। তৃণমূল ছাড়তে আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল। এখন যে যেটা ভালো মনে করছে, সেটাই করছে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়েও সামান্য ভোটে হেরে গেছি। মানুষের সঙ্গেই থাকবো।” রমাপ্রসাদ,‌ স্নেহাশিস, প্রণব, আকাশদীপ প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি! তবে, বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অনেকেই মুকুল রায় বা জেলায় তাঁর প্রতিনিধি স্বরূপ শিবু পানিগ্রাহীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে, হাতে গোনা কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, “আমরা শুভেন্দু দা’র সঙ্গেই আছি।” এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানিয়েছেন, “বিজেপির শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে! আর, দলবদলের বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কথাই শেষ কথা। সম্মতি পাওয়া গেলে পদক্ষেপ করা হবে।” অন্যদিকে, শহর তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুজয় হাজরা প্রমুখদের বক্তব্য, রাজ্য নেতৃত্বের কথাই শেষ কথা। তবে, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত তাঁরা দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় বিপুল জনসমর্থন পাওয়া গিয়েছিল। তাই, একটু বিচার বিবেচনা করে নেওয়া হলে ভালো! বিজেপির জেলা নেতারা অবশ্য এই বিষয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। যদিও, জেলা সহ-সভাপতি অরূপ দাস বলেছেন, “যা রটে তার কিছু তো বটে! তবে, প্রকৃত যারা বিজেপি, তারা ঐক্যবদ্ধ। বিজেপি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে পরবর্তী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

শাহী সভায় (মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠ, প্রতীকী ও ফাইল ছবি, নিজস্ব) :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: বর্ধমানে বিচ্ছেদ, মধুর-মিলন মেদিনীপুরে! স্বামীর হাত ধরে ভাগলপুরে পৌঁছলেন ফুলবতী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুন: চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মেদিনীপুর স্টেশনে একা…

3 hours ago

Midnapore: মাংস-ভাত খাওয়ার পর মদ্যপান, দুই নাবালকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পশ্চিম মেদিনীপুর

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুন: জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি এলাকার নেহাতই খেটেখাওয়া…

6 hours ago

Midnapore: সততার পরিচয় দিয়ে শিক্ষকদের মন জিতলো ভাদুতলা স্কুলের সাত্যকি, মনে করালো বর্ণপরিচয়ের নীতিশিক্ষার কথা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুন: বাঙালির ভাষা শিক্ষা আর নীতিশিক্ষার ভিত গড়ে…

2 days ago

Midnapore: জঙ্গলে মহিষ খুঁজতে গিয়ে দলছুট হাতির হামলায় মৃত্যু দাদার, আশঙ্কাজনক ভাই! শোকের ছায়া শালবনীতে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: গবাদি পশু (মহিষ) খুঁজতে বেরিয়ে দলছুট দাঁতালের…

5 days ago

Midnapore: “এক ট্রলি মোরাম নিয়ে গেলেও পুলিশ ধরছে!” পর্যালোচনা বৈঠকে অনুযোগ খোদ মন্ত্রীর; ‘জবাব’ দিল জেলা পুলিশও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পঞ্চায়েত…

5 days ago

JEE Advance: JEE মেইনসে টপার, অ্যাডভান্সে কেমন ফল করল খড়্গপুরের অর্চিষ্মান? জেনে নিন

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জুন: গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স…

6 days ago