মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর: সত্যিই দুর্যোগ! একটানা প্রবল বর্ষণে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের কর্ণগড়ে অবস্থিত পাচঁ শতবর্ষ প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মহামায়ার মন্দিরের একেবারে সামনে থাকা শতবর্ষ প্রাচীন বট গাছটি পড়ে গেল। মঙ্গলবার রাত থেকে একটানা চলতে থাকা প্রবল বর্ষণের ফলেই বুধবার ভোর ৫ টা – সাড়ে ৫ টা নাগাদ এই গাছটি পড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গাছটির বয়স অন্তত ১০০ বছর বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই গাছটি এভাবে পড়ে যাওয়ায় মনখারাপ গ্রামের সকল বাসিন্দা থেকে শুরু করে আপামর ভক্তকুলের। রোদ-বৃষ্টির সময়ে আগত দর্শনার্থীদের কাছে এই বট বৃক্ষের তলা ছিল এক পরম আশ্রয় স্থল। শুধু নিজেরা নন, এই গাছের তলায় গাড়ি-ঘোড়া রেখে মন্দিরে প্রবেশ করতেন দর্শনার্থীরা। স্বভাবতই, সমাজ মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মন খারাপ তাঁদেরও! অনেকে আবার বলছেন, “বট গাছ সাধারণত পড়ে না! সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়েই হয়তো মাটি আলগা হয়ে গিয়েছিল। তা সহ্য করতে পারেনি অনেক স্মৃতিবিজড়িত এই গাছ।”

thebengalpost.net
ভেঙে পড়ল সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ :

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্ণগড়ের এই মহামায়া মন্দিরের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য ১ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন। সেই অর্থে এবং জেলা ও ব্লক প্রশাসানের উদ্যোগে মন্দিরের সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে গত কয়েক মাস ধরেই। ইতিমধ্যে, অনেক কাজ সম্পূর্ণও হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই বট গাছের গোড়াটি বাঁধানো ছিল। কিন্তু, সেটিকে আরও উন্নত করার জন্য, পুরানো নির্মাণ ভেঙে নতুন করে বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছিল। তাতেই হয়তো কোনোভাবে গোড়া আলগা হয়ে যেতে পারে বা ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে অনেকেই অনুমান করছেন! স্থানীয় গ্রামবাসী থেকে মন্দির দেখভালের দায়িত্বে থাকা অনেকেই বলছেন, পুরানো দিনের পাথরগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, নতুন ভাবে বাঁধানো হবে বলে, তার সঙ্গে একটানা প্রবল বর্ষণ, ফলে গোড়া আলগা হয়ে গিয়েছিল হয়তো! যদিও এই দাবি মানতে নারাজ মন্দির কমিটির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষ। তিনি বললেন, “ওই বাঁধানো অংশ-টি ভেঙে যাচ্ছিল। তাই সংস্কার করার কাজ করা হচ্ছিল। তবে, এর ফলে গাছে কোনো আঘাত লাগেনি! যাই হোক, আমরা আগামীকাল এই নিয়ে আলোচনায় বসবো। যদি কোনোভাবে গাছটি প্রতিস্থাপন করা যায় চেষ্টা করবো। নাহলে তো কিছু করার নেই! নতুন করে আবার গাছ লাগানো হবে। যদিও, সেই গাছের এরকম শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত সুবৃহৎ আকার লাভ করতে সময় লাগবে!” বিষয়টি শোনার পর হতাশ শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা এলাকার সমাজসেবী হিসেবে সুপরিচিত সন্দীপ সিংহেরও। তিনিও বললেন, “৫০০ বছরের পুরানো মন্দির, গাছটির বয়সও অন্তত ১০০ বছর! দেখি সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।”

thebengalpost.net
গোড়া থেকে উপড়ে পড়লো গাছটি :

তবে, গাছকি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব? পরিবেশ প্রেমী রাকেশ সিংহ দেব বললেন, “আমাদের এতখানি অভিজ্ঞতা নেই! তবে, কলকাতার যাদবপুরের অর্জন বসু রায় বলে এক ব্যক্তি আছেন। খবরে পড়েছি, তিনি এই কাজ সফলভাবে করছেন।” খবর নিয়ে জানা গেল, গত ৭ বছরে ৫০০-র বেশি গাছ বাঁচিয়ে নজির গড়েছেন যাদবপুরের প্রিন্টিং টেকনোলজি শাখার ইঞ্জিনিয়ার অর্জন বসু রায়। আমফান তাণ্ডবে ভেঙে পড়া কয়েকশো গাছ নাকি বাঁচিয়েছেন তিনি। পড়ে যাওয়া ১০০ বছরের পুরানো অশ্বত্থ গাছও তিনি বাঁচিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে, সুপ্রাচীন এই বট গাছ পড়ে যাওয়া ও সেই গাছের প্রতিস্থাপন সম্পর্কে ভাদুতলার বনাঞ্চল আধিকারিক (রেঞ্জ অফিসার) তথা প্রকৃতিপ্রেমী পাপন মোহান্ত বললেন, “এবার যেভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, তাতেই এরকম অঘটন ঘটছে! মাটি শুকানোর আগেই, ফের প্রবল বর্ষণ। এর ফলেই বড় বড় গাছও পড়ে যাচ্ছে। তবে, প্রতিস্থাপনের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

thebengalpost.net
মনখারাপ এলাকাবাসীর :