তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ মার্চ:”আমাদের স্কুল যাওয়ার রাস্তা খুব খারাপ, সরকার উদাসীন! রাস্তা সারানোর জন্য মুক্ত হস্তে দান করুন।” বেহাল রাস্তায় দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে অভিনব প্রতিবাদ পড়ুয়াদের। প্রসঙ্গত, গত ৯ মার্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সকাল ১০টা নাগাদ, দাসপুর ১ ব্লকের এই বেলতলা-সরবেড়িয়ার বেহাল গ্রামীন রাস্তায় মেশিন ট্রলির ধাক্কায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল ব্রাহ্মনবসান উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী নাতাশা পোড়িয়ার। মৃত্যুর জন্য বেহাল রাস্তাকেই দায়ী করে পথ অবরোধও করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু, রাস্তা সারাই হয়নি এখনও। তাই, ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাই রবিবার সরকারী রাস্তা সারাইয়ের আবেদনে পথচলতি মানুষের কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে নামল। আবেদন, যা পারবেন দান করুন, “হাত জড়ো করে আবেদন করছি! আপনারা আর্থিক সাহায্য করুন। এই টাকাই আমরা দাসপুর ১ ব্লক প্রশাসনের কাছে তুলে দেব। তবেই দ্রুত এই রাস্তার মেরামত হবে। আমাদের বান্ধবীর মতো আর কোনো ছাত্র-ছাত্রী বা পথচলতি মানুষকে খারাপ রাস্তার কারণে অকালে প্রাণ হারাতে হবে না।” সোমবার সেই অর্থ বিডিও (BDO)’র হাতে তুলে দিল পড়ুয়ারা।

thebengalpost.net
পথে পড়ুয়ারা:

উল্লেখ্য যে, রবিবার সকাল থেকে দাসপুরের কলমীজোড় এলাকায় পথে নেমেছিল এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা। উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ ওই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এমনকি পুলিশ পথ অবরোধ তুলতে গেলে তাদের সাথেও বচসায় জড়িয়ে ছিলেন এলাকাবাসী। দ্রুত রাস্তা মেরামতের আশ্বাসে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা পর ওইদিন বিকেল ৫ টা নাগাদ উঠেছিল অবরোধ। এরপর, দিনের পর দিন কেটেছে। কলমীজোড়ের নাতাশার চিতার আঁচে আজ উত্তপ্ত ছাত্র সমাজ। এলাকার আশপাশের সড়বেড়িয়া বি সি রায় উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মনবসান উচ্চবিদ্যালয়ের মতো একাধিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল ড্রেস পরেই ওই বেহাল রাস্তায়, কলমীজোড়ের পথে নেমেছে। হাত পেতে অর্থ সংগ্রহ করছে।ওদের কাতর আবেদন পথচলতি মানুষের কাছে, “দয়া করে কয়েকটা টাকা দিন।খারাপ রাস্তায় পড়ে আমাদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান।” দাসপুর ১ ব্লক প্রশাসন থেকে মন্ত্রী শিউলি সাহা- এই রাস্তার বেহাল দশা সবারই গোচরে। তবুও, হাল ফেরেনি রাস্তার। এদিকে, ছাত্র-ছাত্রীদের এই অভিনব প্রতিবাদে মুগ্ধ স্থানীয়রা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেখে কষ্ট লাগলেও নতুন প্রজন্ম যে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে এটাই আনন্দের। এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর পিংলার বিধায়ক তথা সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনকে বলব দ্রুত রাস্তার মেরামত করার জন্য। আর রাস্তা নিশ্চয়ই খারাপ সেজন্যই বাচ্চারা রাস্তায় নেমেছে অর্থ সংগ্রহের জন্য। কিন্তু, বাচ্চাদের রাস্তায় নামার জন্য যদি কেউ এই ধরনের প্ররোচনা দিয়ে থাকে সেটিও অতি নিন্দনীয়।”

thebengalpost.net
অর্থ সংগ্রহ:

এদিকে, সোমবার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিওর হাতে অর্থ তুলে দিতে আসেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। এমনকি রাস্তা মেরামতের দাবি জানিয়ে বিডিওকে একটি লিখিত আবেদন জানায় তারা। যদিও দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও বিকাশ নস্কর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সেই অর্থ নেননি, ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন পত্রটি নেন। তাই, ছাত্রছাত্রীরা তাদের অর্থ মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দেবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে বিডিও বিকাশ নস্কর ক্যামেরার সামনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি! তিনি বলেন, দ্রুত রাস্তা মেরামতের সব ধরনের ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করবেন। দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুনিল ভৌমিক বলেন, “রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল, এটা আমরাও জানি। দ্রুত রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু, এই ধরনের আন্দোলনের পিছনে হয়তো মদত আছে!”