thebengalpost.in
সঠিক নাম-পরিচয়হীন এক রোগিনীর সেবায় নার্সরা (মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, নিজস্ব ছবি) :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মণিরাজ ঘোষ, ২৬ আগস্ট: সুদূর বাংলাদেশ হোক কিংবা এই জেলারই (পশ্চিম মেদিনীপুর) বিভিন্ন প্রান্ত; এক শ্রেণীর সাধারণ মানুষের প্রবণতা হয়েছে, বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মা কিংবা আত্মীয়-আত্মীয়াকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েই ‘বেপাত্তা’ হয়ে যাওয়া! ভর্তির সময় এখনও সচিত্র পরিচয়পত্র বা আধার কার্ড বাধ্যতামূলক না হওয়ার সুযোগ নিয়ে, তাঁরা ‘ভুল’ বা ‘মিথ্যে’ ঠিকানা দিয়ে রোগী-কে ভর্তি করে দিচ্ছেন, কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর আর নিতে আসছেন না! মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালই হয়ে উঠছে ওই রোগী বা রোগিনীর অস্থায়ী ঠিকানা। তাঁর খাওয়া-দাওয়া, সেবা-শুশ্রূষা যথাসাধ্য করছেন হাসপাতালের নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন কলেজের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরা ছাড়াও, এই ‘নিদারুণ’ কাহিনীও ব্যক্ত করলেন কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু। তিনি বললেন, “বছরের পর বছর ধরে এই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে! এও এক সামাজিক ব্যাধি। বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা বা-মা কিংবা আত্মীয় পরিজনদের দায় নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলার কুৎসিত মানসিকতা। বিভিন্ন কারণেই, ভর্তির সময় এখনও আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা সম্ভব হয়নি (তবে, বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় বা ডিসচার্জের সময় তা বাধ্যতামূলক), মৌখিক বক্তব্যের উপরই নাম-ঠিকানা লেখা হয়। সেই সুযোগটাই নিচ্ছেন কিছু নীচ মানসিকতার লোকজন। এরপর, ওই রোগীর থাকা-খাওয়া-দাওয়া সবকিছুর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ-কে। সর্বোপরি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের খাইয়ে দেওয়া, বাথরুম করানো সবকিছুই করছেন আমাদের নার্সিং স্টাফ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরবর্তী সময়ে আমরা অনেক সময় পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে, ওনারা হোম বা কোথাও নিয়ে যান!” প্রতিদিন গড়ে মেদিনীপুর সদর হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এই ধরনের প্রকৃত নাম ও ঠিকানাহীন রোগী-কে খুঁজে পাওয়া যাবে অন্তত ৫ থেকে ৭ জন।

thebengalpost.in
ঝুনু রানী বিশ্বাস (মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, নিজস্ব ছবি) :

বুধবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েও এই ধরনের একাধিক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল। কেউবা ভর্তি মেডিসিন বিভাগে (মেল ও ফিমেল দু’জায়গাতেই), কেউবা ভর্তি অর্থোপেডিক বিভাগে, কেউবা ভর্তি সার্জারি বিভাগে! ই এন টি (ENT) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সেন শোনালেন, “দীর্ঘদিন ধরে দুর্গা ঘোষ (প্রকৃত নাম অন্যও হতে পারে) নামে এক অশীতিপর বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও, আমাদের বিভাগে ভর্তি ছিলেন। আমাদের নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দীর্ঘদিন তাঁর সেবা-সুশ্রুষা করে গেছেন। এই দিনকয়েক আগে তাঁকে নিয়ে গেছেন বাড়ির লোক।” অন্যদিকে, মেডিসিন (ফিমেল) বিভাগে ভর্তি ঝুনু রানী বিশ্বাস নামে বছর ৫৫ এর মহিলা-র কাহিনী আরও মারাত্নক! তাঁর বাড়ি সুদূর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় (মহিলার নিজের বক্তব্য অনুযায়ী) বলে জানিয়েছেন তিনি, তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক নাম-ঠিকানা নেই! তাঁর বিশেষ কোনো রোগ-জ্বালাও ছিলনা, জ্বর ও পেটের সামান্য সমস্যা ছিল বলে জানা গেছে। ১১ দিন আগে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাঁকে কেউ বা কারা ভর্তি করে দিয়ে গেছে। গত ৭-৮ দিন ধরে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু, কেউ এসে নিয়ে যায়নি। অগত্যা পড়ে আছেন হাসপাতালেই। বেড না থাকায় ঠাঁয় হয়েছে মেঝেতেই! শুয়ে শুয়ে তিনি বললেন, “আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। সেখানে ঘর-বাড়ি আছে।” কিন্তু এখানে কিভাবে? হয়তো কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন, যা শোনালেন তা মারাত্মক! বললেন, “এক দালালের মারফত এখানে এসেছি। নভেম্বরে এসে নিয়ে যাবে বলে গেছে!” এই কাহিনী শুনে কিছুটা হেসেই ফেললেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ! তিনি বললেন, “আমি তো বলেইছিলাম, এখানে বাংলাদেশের রোগী বা রোগিনীকেও এভাবে রেখে দিয়ে চলে যায়! আর আমাদের এখানকার তো আছেই।” সব শুনে, রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সুজয় হাজরা (বর্তমানে, তিনি শাসকদলের জেলা সভাপতিও) বললেন, “হ্যাঁ, প্রায়ই শুনছি এই ধরনের কথা। সরকারি হাসপাতালে অবশ্যই সব ধরনের রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হবে, কিন্তু সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও না নিয়ে যাওয়ার মানসিকতা অত্যন্ত হীনতার পরিচয়। সকলেরই একদিন বয়স হবে! বাড়ির বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাথে এই ধরনের ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয়। আর, অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। অধ্যক্ষের সাথে কথা বলবো।”

thebengalpost.in
সঠিক নাম-পরিচয়হীন এক রোগিনীর সেবায় নার্সরা (মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, নিজস্ব ছবি) :