Special Article

ফিরিয়ে দিল পশ্চিম মেদিনীপুর! হারিয়ে যাওয়া পরশমণি ৭ বছর পর সত্যজিতের কাছে, দূর থেকেই দেখলেন বীণা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ সেপ্টেম্বর: বাবা-মায়েদের কাছে তাঁদের সন্তানেরা তো ‘পরশমণি’ই হয়। ধনী-দরিদ্র, সুস্থ-অসুস্থ, পুত্র-কন্যা নির্বিশেষে তারা যে বাবা-মায়েদের “সাত রাজার ধন এক মানিক”! পরশমণি-ও ছিল তার বাবা-মায়ের হৃদয়ের ধন। হারিয়ে গিয়েছিল ট্রেনে যাত্রা করার পথে! সাত বছর তাকে ফিরে পেলেন বাবা সত্যজিৎ সিং। তবে, মাসখানেক আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন মা বীণা সিং! মা-এর সাথে ট্রেনে করে যাত্রা করতে করতেই হারিয়ে গিয়েছিল বছর দশেকের পরশমণি। সেই মা-কে আর দেখতে পাবেনা, বর্তমানে বছর ১৭ এর কিশোরী। একইসাথে আনন্দ ও বেদনার পূর্ণ এই ঘটনার সাক্ষী থাকলো পশ্চিম মেদিনীপুর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে, ‘দাঁতন মানব কল্যান কেন্দ্র’ (বেসরকারি হোম) মঙ্গলবার পরশমণি-কে তার বাবা ও ভাইয়ের হাতে তুলে দিল।

বাবার সাথে পরশমণি :

প্রসঙ্গত, বছর সাতেক আগে (২০১৪ সালে) পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচক স্টেশন থেকে মা-এর সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছিল তাঁর মেজো মেয়ে পরশমণি। পথেই কোনো এক স্টেশনে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় পরশমনি সিং। বছরখানেক ধরে চারিদিকে খোঁজ চালায় পরিবারের লোকজন। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। কিন্তু, শেষমেষ খোঁজ না মেলায় একপ্রকার আশা ছেড়ে দেন বাবা মা। অবশেষে, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৭ বছর পর  দাঁতনের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বেসরকারি হোম থেকে বাড়ি ফিরলো পরশমনি মুর্মু। জানা গেছে, সেই সময় সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন থাকা পরশমণি ট্রেনে করে কোনভাবে বর্ধমানে চলে যায়। সেখান থেকে তাকে পুলিশ ও চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে মেদিনীপুরে সরকারি হোমে রাখা হয়। বেশ কয়েক বছর পর, ২০২০ সাল নাগাদ তাকে দাঁতনের বেসরকারি  হোমে পাঠানো হয়। দাঁতনের হোমে চিকিৎসা শুরু হয় পরশমণির। আসতে আসতে নিজের নাম, পরিচয় ও পরিবারের সন্ধান দিতে পারে পরশমণি। এখন সে অনেকটাই সুস্থ। পড়াশোনাও করছে। এরপরই পরশমণি-র খোঁজ শুরু করে হোম কর্তৃপক্ষ।

পরশমণি তার বাবার সাথে দাঁতনের হোমে, বাড়ি ফেরার আগে :

হোম কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আগে বালিচকেই থাকত তার পরিবারের সকলে। বাবা সাপুড়িয়ার কাজ করে সংসার চালাতেন।বর্তমানে, পরিবারের সকলে ওড়িশার জলেশ্বরের কাছে শলিকোঠা নামক এক গ্রামে  থাকে। মাসখানেক আগে তার মা বীণা সিং-ও মারা গেছেন। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ নিয়ে পরশমণি-কে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বছর সাতেক আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়ে খুশি সত্যজিৎ সহ পরিবারের লোকজন। খুশি পরশমণি-ও। বিদায়বেলায় চোখে জল দাঁতন মানব কল্যাণ কেন্দ্রের সদস্য-সদস্যাদেরও! তবে, বাড়ি ফিরলেও আর মায়ের সাথে দেখা হবে না সুস্থ হয়ে ওঠা পরশমণি-র। মিলনের মাঝেও এটুকুই শুধু বেদনার ছোঁয়া!

দাঁতন মানব কল্যাণ কেন্দ্র :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: আদালতের নির্দেশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে মেদিনীপুর শহরে আক্রান্ত পুলিশ ও পুরকর্মীরা, গ্রেফতার ৪

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মে: আদালতের নির্দেশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে আক্রান্ত…

3 days ago

IIT Kharagpur: কোভিড আক্রান্ত IIT খড়্গপুরের পড়ুয়া; উপসর্গ সেই একই…

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মে: সরকারিভাবে জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিললো।…

3 days ago

Midnapore: মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকেও ৯৫ শতাংশ নম্বর, বিরল রোগে আক্রান্ত স্বর্ণাভ চায় ডাক্তার হতে; পাশে মন্ত্রী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ মে: মাত্র ৩ বছর বয়সে শরীরে বাসা বাঁধে…

4 days ago

Midnapore: আবাসন থেকে উদ্ধার মহিলা নাট্যকর্মীর ঝুলন্ত মৃতদেহ, পর পর দু’দিন দুই শিল্পীর প্রয়াণে মুহ্যমান মেদিনীপুর শহর

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ মে: পেশায় শিক্ষিকা হলেও নাট্যকর্মী হিসেবেই তাঁর পরিচিতি…

6 days ago

Midnapore: কথা রাখলেন পুলিশ সুপার, মাধ্যমিকে উজ্জ্বল সিভিক-কন্যা লাবনীর পাশে পশ্চিম মেদিনীপুরের SP

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ মে: বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার। মেয়ে লাবনী প্রথম থেকেই…

1 week ago