দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২০ অক্টোবর: “এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে/আমার এ ঘরে থাকো আলো করে…”। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত সেই গানের ‘লক্ষ্মী’র মতো ‘ঘরে বসে’ ঘর-আলো করার সৌভাগ্য হয়নি ‘গৃহলক্ষ্মী’ সোয়েতা’র! তবে, ঘর ‘আলো’ তিনি করেছেন। সেজন্য তাঁকে রাজপথে নামতে হয়েছে; ধরতে হয়েছে টোটোর হাতল (হ্যান্ডেল)। হয়ে উঠেছেন বিপ্লব আর সংগ্রামের শহর মেদিনীপুরের প্রথম মহিলা টোটো চালক। লকডাউনের ফলে স্বামীর কাপড়ের ব্যবসায় দেখা দিয়েছিল মন্দা। অন্যদিকে, ব্যবসায়িক সূত্রে লক্ষাধিক টাকার প্রতারণার শিকার হতে হয়েছিল স্বামী-স্ত্রী’কে। সঙ্গে দীর্ঘ লকডাউন আর অতিমারী পরিস্থিতি! জেলা শহর মেদিনীপুরের খাপ্রেল বাজারের চৌধুরী পরিবারে দেখা দেয় তীব্র আর্থিক অনটন। তাই, সংসারের হাল ধরতে অবশেষে ‘গৃহলক্ষ্মী’ সোয়েতা চৌধুরী-কে হয়ে উঠতে হয় টোটো চালক।

thebengalpost.net
সোয়েতা চৌধুরী :

বছর চল্লিশের সোয়েতা এখন একহাতে ধরেছেন সংসারের হাল, অন্যহাতে টোটোর হাতল (হ্যান্ডেল)। গত ২৩ বছর আগে, পুরুলিয়ার বলরামপুরের বাসিন্দা সোয়েতা’র বিয়ে হয় মেদিনীপুরের খাপ্রেল বাজারের সুতনু চৌধুরীর সঙ্গে। বছর সাতেক আগে, স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। ঠিকঠাকই চলছিল সেই ব্যবসা। কিন্তু, কয়েক বছর আগে ব্যবসা সূত্রে ১৪ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার হতে হয় তাঁদের। তার উপর কোভিড অতিমারী আর লকডাউন। ফলে, শহরের জেলা পরিষদ রোডে স্বামীর কাপড় দোকান চলছিল না একেবারেই! সংসারে দেখা দেয় অর্থাভাব। মাস দুয়েক আগে সংসারের হাল ধরতে সোয়েতা দেবী সিদ্ধান্ত নেন, সংসার চালাতে তিনি টোটো চালাবেন। স্বামীর সহায়তা ও সমর্থন নিয়ে, নিজের গহনা বিক্রি করে কিনে ফেলেন টোটো! বর্তমানে, মেদিনীপুরে প্রায় হাজারখানেক বৈধ টোটো চললেও, শহরের প্রথম মহিলা টোটো চালক সোয়েতা-ই। সমাজের সমালোচনা, চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে সোয়েতা দেবী এখন টোটো চালিকা।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরের প্রথম মহিলা টোটো চালক :

বুধবার কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন সোয়েতা দেবী নিজেই জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয় টোটো চালিয়ে। তিনি বলেন, “প্রথম প্রথম ভয় লাগছিলো, লোকে কি বলবে! পরে নিজেকে বোঝালাম কোনো কাজই ছোট নয়। নিজের সংসারের হাল ধরতে, মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম টোটো নিয়ে। এখন নিজেকে গর্বিত মনে হয়, যে একজন মহিলা হয়েও পুরুষ শাসিত সমাজে মাথা উচুঁ করে রোজগার করছি!” স্বামী সুতনু চৌধুরী বলেন, “আমি সবসময় সোয়েতার সব কাজ সমর্থন করেছি, উদ্বুদ্ধ করেছি। আর, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই রোজগার করতে হচ্ছে সংসার চালাতে। আমি সোয়েতা’র জন্য গর্বিত!” মেদিনীপুর টোটো চালক ইউনিয়নের চেযারম্যান বুদ্ধদেব মহাপাত্র বলেন, “যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে! এর স্বার্থক নিদর্শন- সোয়েতা দেবী। ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরের একজন মহিলা টোটো চালককে আমরা সব রকম ভাবে সাহায্য করতে পেরেছি, সেটা আমাদেরও গর্ব। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হয়ে যেভাবে মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য, স্বনির্ভর করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করছেন, তা আমাদেরও উদ্বুদ্ধ করে অসহায় মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে।”