তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ ডিসেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই পৌরসভায় পরকীয়ার জেরে স্ত্রী’র হাতে স্বামী খুন। হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছে বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন স্ত্রী! তবে, শেষ রক্ষা হয়নি। সৎকারের আগেই গ্রামবাসীদের তৎপরতায় ধরা পড়ে যায় স্ত্রী। ঘাটালের এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী’র নেতৃত্বে তদন্তে নামে ঘাটাল থানার পুলিশ। আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয় স্ত্রী-কে। আটক করা হয় আরও এক সন্দেহভাজন যুবককে (শান্তনু পাল)। জেরায় ভেঙে পড়ে দু’জনই। সোমবার বিকেল নাগাদ দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়। আগামীকাল তাদের আদালতে তোলা হবে। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। আরও কেউ জড়িত আছে কিনা দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার সকালে সৎকার করতে গিয়ে, মৃত তপন কুমার ঘোষের (৪৮) গলায় দাগ দেখে গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকেদের সন্দেহ হয়। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। সৎকারের জন্য কাঠ কাটা, চিতা সাজানো সবই প্রায় তৈরি ছিল। পরে, পরিবারের লোকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্ত্রী রূপালী ঘোষ-কে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ খুনের বিষয়টিতে নিশ্চিত হয়ে, তাঁকে এবং আরেক যুবককে (প্রেমিক শান্তনু পাল) গ্রেফতার করে। অভিযোগ পাওয়ার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ ২ জনকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করল। ঘাটালের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, “ঘটনায় আমরা এখন পর্যন্ত ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে।” ঘটনায় সারা এলাকার মানুষ স্তম্ভিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মৃত তপন কুমার ঘোষের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে নার্সিং পড়ার সূত্রে বাইরে থাকে। ছেলে পড়াশোনার জন্য মাসির বাড়িতে থাকে। ছোট মেয়ে তাঁদের সঙ্গে বাড়িতে থাকে। স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, রবিবার রাতে ক্ষীরপাই পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বামারিয়া এলাকায় গৃহবধূ রুপালি ঘোষ চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। বলেন, তাঁর স্বামীর হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সাথে সাথেই খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। তাঁরা দেখেন তপন ঘোষ বাথরুমে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। রুপালির কথামতো স্থানীয়রা মৃতদেহ সৎকার করার আয়োজন করেন। দেহ সৎকার করতে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা লক্ষ্য করেন, মৃতদেহের গলায় দড়ির চিহ্ন, শরীরের অনেক জায়গায় ক্ষতচিহ্নের দাগ! সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে খবর দেন তাঁরা। খবর পেয়ে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ছুটে আসেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, তপনের স্ত্রী রুপালির বিবাহবহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক ছিল। তার জেরেই খুন বলে পরিবারের দাবি! সোমবার মৃত তপন ঘোষের ভাই স্বপন ঘোষ বলেন, “দাদার গলায় একাধিক জায়গায় ক্ষত চিহ্নের দাগ পাওয়া গেছে। ভাইজি বাসন্তী ঘোষের থেকে জানতে পেরেছি ওই রাতে আরো দু’জন ব্যক্তির আগমন ঘটেছিল দাদার বাড়িতে। ওই রাতে বাড়িতে দাদা, বৌদি, ভাইজি ওরা তিনজনই ছিল। পুলিশ তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন করুক।” পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে এবং রুপালি ঘোষকে আটক করে। পরে তাঁকে এবং এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।