দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ অক্টোবর: দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তৃতীয় বর্ষের মৃত ছাত্র সোহম পাত্র। চলছিল কাউন্সেলিং সহ মনোরোগের নানা চিকিৎসা। নিয়মিত ওষুধও খেতে হতো। এতকিছু সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হলো না! মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মায়ের সাথে হাওড়া-আদ্রা শিরোমণি এক্সপ্রেস ধরে বাড়ি (বাঁকুড়া) ফেরার পথেই চলন্ত ট্রেন থেকে মেদিনীপুরের কাঁসাই (কংসাবতী) নদীতে ঝাঁপ দেন বছর কুড়ির সোহম। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে কাঁসাই হল্টের কাছে নদী থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করে খড়্গপুর গ্রামীণ থানার অধীন সাদাতপুর ফাঁড়ির পুলিশ।

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ মৃত পড়ুয়ার দেহ তুলে দেওয়া হয় বাবা-মা’র হাতে। মঙ্গলবার রাত্রি ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ শিরোমণি এক্সপ্রেস যখন কাঁসাই হল্টে ঢোকে ঠিক সেইসময়ই সোহমের মা ট্রেনের বাথরুমে (শৌচালয়ে) যান। আর ঠিক সেইসময়ই দরজার কাছে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন সোহম। প্রাথমিক তদন্তের পর ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের আধিকারিকরা। ‘ছেলে আত্মহত্যাই করেছে’ বলে দাবি করেছেন সোহমের বাবা-মা’ও। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাঁকুড়া শহরের ১৫নং ওয়ার্ডের প্রণবানন্দপুরে বাড়ি সোহমের। সোহমের বাবা দীপককুমার পাত্র একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান। মা মল্লিকা পাত্র গৃহবধূ। একমাত্র দিদি চাকরিসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। সোহমও পড়াশোনার সূত্রে যাদবপুরেই পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। মা-ও মাঝেমধ্যেই ছেলের কাছে গিয়ে থাকতেন। প্রায় বছরখানেক ধরে সোহম মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলেও রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্রে এও জানা গেছে, কলকাতায় ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট এবং কাউন্সিলরের কাছে সোহমের চিকিৎসাও করাচ্ছিলেন বাবা-মা। তা সত্ত্বেও ‘অবসাদ’ থেকে তাঁকে বের করে আনা যায়নি বলে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন। সোহম কেন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিল? এই প্রশ্নের উত্তরে বাবা দীপককুমার পাত্র জানিয়েছেন, “ওর ইন্টারনাল কিছু ব্যাপার (সমস্যা) ছিল!” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা বন্ধুবান্ধব কিংবা র্যাগিং-এর মতো কোন বিষয়কে দায়ী করেননি বাবা-মা কেউই। শোকার্ত মা মল্লিকা দেবী বলেন, “আমার ছেলেকে যাদবপুরের সবাই খুব ভালোবাসতো। আর ও ছিল তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। র্যাগিং-এর কোন প্রশ্নই ওঠেনা!”
তবে, ঠিক কি কারণে মানসিক অবসাদ? তা এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি তদন্তকারীরা। এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র কোন মন্তব্য করতে চাননি বাবা-মা’ও। বুধবার তাঁদের বাঁকুড়া শহরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরাও বিশেষ কিছু জানাতে পারেননি! জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ইদানিং সোহমের অবসাদের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, রাতে ভালো করে ঘুমও হতোনা! হঠাৎই ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করতেন। মাঝেমধ্যেই ‘নিজেকে শেষ’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিতেন। সেজন্যই মা তাঁর কাছে গিয়ে থাকতেন। ছেলের ইচ্ছেতেই মঙ্গলবার তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। তবে, শেষমেশ বাড়ি পৌঁছনো আর হয়নি! তার আগেই নিজেকে ‘শেষ’ করে দেন সোহম। বাঁকুড়ার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে যাদবপুরে গিয়ে মানসিক অবসাদের শিকার হলেন কিভাবে? তবে কি কোনও খারাপ চক্রে পড়ে গিয়েছিলেন সোহম? নাকি কোনও সম্পর্ক-ঘটিত জটিলতা? সেই উত্তরই খুঁজছেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। যদিও, এই ঘটনায় সোহমের বাবা-মা কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। তাঁরা বলেন, “আমাদের কোন অভিযোগ নেই…ও আত্মহত্যাই করেছে!”











