thebengalpost.net
Vidyasagar University:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ এপ্রিল:’চাকরি বিক্রি’-কে কেন্দ্র করে যখন নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল গোটা রাজ্য, ঠিক তখনই PhD’র আসন বিক্রির নামে আর্থিক-প্রতারণার অভিযোগ উঠল দুই যুবকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে দুই প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ বা FIR- ও দায়ের করেছেন প্রতারিত দম্পতি। জানা যায়, কলকাতার টালা এলাকার বাসিন্দা শুভঙ্কর মান্না ও তাঁর স্ত্রী-কে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vidyasagar University) MBA বা ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি (PhD)’র সুযোগ করিয়ে দেওয়ার নামে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দুই প্রতারক। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়ো রসিদ ও স্ট্যাম্প ছাপিয়ে তাঁদের দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। চলতি মাসের (এপ্রিলের) দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁরা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vidyasagar University) এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পুরোটাই ভুয়ো! তাঁরা প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন। এরপরই, বুধবার (১৯ এপ্রিল) ওই দম্পতি এফআইআর (FIR) দায়ের করেন সিঁথি থানায়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

শুভঙ্কর মান্না জানান, কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠা‌ন থেকে ২০০৮ সালে এমবিএ (MBA) করেন তিনি। সেখানে পড়াতেন মণিগ্রীব বাগ নামে এক ব্যক্তি। পাশ করে বেরোনোর পরেও ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। মণিগ্রীবই এক দিন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন শুভঙ্কর পিএইচডি (PhD) করতে ইচ্ছুক কি না! এর পরই তিনি পিন্টু রানা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শুভঙ্করকে যোগাযোগ করতে বলেন। শুভঙ্করকে বলা হয়, পিন্টু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী। শুভঙ্কর এও বলেন, “মণিগ্রীব স্যার বলায় সন্দেহ হয়নি। স্যারও ওই বিশ্ববিদ্যালয় (বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়) থেকেই পিএইচডি করেছেন বলে জানান। প্রথমে অল্প কিছু টাকা পিন্টুকে পাঠাতে বলা হয়। এর পরে কয়েক দফায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা দিই।” এরপর, মণিগ্রীব তাঁকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাম্প সহ একটি রসিদ দেন বলে অভিযোগ। এরপর, তাঁর স্ত্রী-কেও ম্যানেজমেন্টের একটি সংরক্ষিত আসনে PhD করাতে চান কিনা জানতে চাওয়া হয়! তিনি রাজি হলে ফের ৭০ হাজার টাকা দিতে হয় পিন্টু রানাকে। যদিও, সেই টাকার রসিদ দেওয়া হয়নি। এরপরই, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে (১২ বা ১৩ এপ্রিল) বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এসে তাঁরা (ওই দম্পতি) সত্যিটা জানতে পারেন!

এই বিষয়ে শুক্রবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, ওঁরা এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। আমাদের ওই রসিদ টিও দেখান এবং পুরো বিষয়টি বলেন। আমরা বুঝতে পারি ওঁরা প্রতারিত হয়েছেন। সেকথা ওঁদের জানাই। ইতিমধ্যে ওঁরা থানায় অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি। আমাদের কাছে সমস্ত তথ্য সহ লিখিতভাবে জানালে, আমরাও থানায় একটা FIR করতে পারি। কারণ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। আপাতত আমরা তদন্তে সবরকম সাহায্য করবো।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে এও জানা যায়, VU-তে পিএইচডি’র ক্ষেত্রে ভর্তির সময়ে দিতে হয় ১০,১০০ টাকা। কোর্সওয়ার্কের জন্য ৮ হাজার টাকা এবং থিসিস জমার সময়ে আরও ১৭ হাজার। সবমিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে, এভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে পিএইচডি-তে সুযোগ পাওয়া যায় না বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। অন্যদিকে, একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে ওই দুই প্রতারকের (মণিগ্রীব ও পিন্টু) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাঁরা কার্যত বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও পরস্পরের ঘাড়ে দোষ ঠেলতে থাকেন! সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কলকাতার একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের সঙ্গে এই দুই প্রতারক কোনো এক সময় যুক্ত ছিলেন হয়তো। সেখান থেকেই এভাবে প্রতারণার জাল বিছিয়ে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে, সঠিকভাবে তদন্ত করলে পুলিশ যে অবিলম্বে এই দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবেন, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.net
Vidyasagar University: