দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১ মিনিটে আবহাওয়া বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠানের পুরানো প্রশাসনিক ভবনের ছাদ থেকে উড়লো জিপিএস পরিচালিত রেডিওসন্ড লাগানো হিলিয়াম পূর্ণ বেলুন। বায়ুমণ্ডলের ২৭.৮৩১ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে এই বেলুন। বিকেল ৩টে ৫৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের পরীক্ষামূলক গবেষণার সমস্ত তথ্য প্রদান করার পর এটি ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করে। মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৪.৮৬ কিলোমিটার রৈখিক দূরত্ব অতিক্রম করে বিকেল ঠিক ৩ টে বেজে ৫৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ড নাগাদ ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গুরাবাঁধা বনাঞ্চলে পতিত হয় এই বেলুন। ততক্ষণ অবধি প্রতিটি মুহূর্তের জিপিএস লোকেশনও প্রদান করে রেডিওসন্ড (আবহাওয়া বিষয়ক যন্ত্র) লাগানো এই বেলুন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরো-র বিজ্ঞানীরা জানান, যে উদ্দেশ্যে এই বিশেষ বেলুন বায়ুমণ্ডলে পাঠানো হয়েছিল, তা সফল হয়েছে।

স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, চাপ, বাতাসের গতিবেগ ও গতিবিধি সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এবং আবহাওয়া বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বার্থেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ বিভাগের তরফে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ইসরো (ISRO)-র অধীন ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সার্ভিস সেন্টারও। রবিবাসরীয় দুপুরে আকাশে হিলিয়াম পূর্ণ সুবিশাল এই বেলুন পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয় জেলা প্রশাসন এবং নিকটবর্তী কলাইকুন্ডা এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকেও। বায়ুমণ্ডলের পরীক্ষামূলক গবেষণা তথা আবহাওয়া সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ধারণা লাভ এবং ভূসমালয়ে থাকা উপগ্রহের তথ্য যাচাইয়ের উদ্দেশ্যেই এই বেলুন উৎক্ষেপণ বলে জানিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের ডিরেক্টর অধ্যাপক যতিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা তিনিই। ইসরো-র তরফে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. হারীফ বাবা সায়েব কে।
রবিবার দুপুরে আবহাওয়া বিজ্ঞান সংক্রান্ত এই মিশনের উদ্বোধন করেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী। এদিনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত না থাকলেও, শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কুমার কর। রবিবার সন্ধ্যায় উপাচার্য জানান, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের এই অসাধারণ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এর ফলে অখণ্ড মেদিনীপুরের আবহাওয়া সংক্রান্ত ধারণা আরও সুস্পষ্ট ও সুন্দরভাবে পাওয়া যাবে।” এই উদ্যোগ তথা প্রকল্পের মূল কান্ডারী অধ্যাপক যতিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষামূলক এই গবেষণাতে আমরা সফল হয়েছি। এই এলাকার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, চাপ, বাতাসের গতিবেগ ও দিক নির্দেশ সম্পর্কে আমরা একটা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে তা প্রকাশ করব। মাসে একবার করে এই জিপিএস এডেড এবং রেডিওসন্ড লাগানো বেলুন আকাশে (বায়ুমণ্ডলে) পাঠানোর লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি। এর ফলে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য এবং বৃষ্টি, বজ্রপাত, সাইক্লোনের মত প্রাকৃতিক বিষয়গুলি সম্পর্কেও আগাম ধারণা লাভ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি।”