দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ নভেম্বর: আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) এবং ইনস্টিটিউট অফ আর্থ সায়েন্সেস (একাডেমিয়া সিনিকা, তাইওয়ান/ Earth Sciences, Academia Sinica, Taiwan)-এর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বা ঘূর্ণাবর্ত (Cyclone ????)- এর উদ্ভব ও ব্যাপ্তি বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়েছেন। এই গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা যেকোনো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে জলীয় বাষ্পের (বা, আর্দ্রতার) উৎস এবং তার তীব্রতা বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে, ওই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি আরো নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করা যাবে বলে বিজ্ঞানীদের মত।
আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক (ভূতত্ত্ব বিভাগ) ড. অনিন্দ্য সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমরা সম্প্রতি ৪-৫ প্রকারের ঘূর্ণিঝড়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি। নেপার্টক, মেরান্টি, মালকাস এবং মেগি নামে চারটি প্রবল ঝড় নিয়ে গবেষণা করেছি, যা ২০১৬ সালে আঘাত হেনেছিল তাইওয়ানে। দেখা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।” এমনকি, গত পাঁচ বছরে এর তীব্রতা বা ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। এজন্য মূলত বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming)-কেই দায়ী করেছেন দুই প্রতিষ্ঠানের গবেষক তথা বিজ্ঞানীরা। আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক ড. সৌরেন্দ্র ভট্টাচার্যর মতে, “যেকোনো ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। আর, সেই সময় বাতাসের অবশিষ্ট জলীয় বাষ্প পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এটি অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের আইসোটোপের অনুপাতকে পরিবর্তন করে। আমরা এই ঘাটতির পরিমাণ ট্র্যাক করেছি, গণনা করেছি এবং এই চলমান ঘূর্ণিঝড় থেকে কতটা বৃষ্টি হয়েছে বা বৃষ্টির ঘাটতি হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য মডেল তৈরি করেছি।”
অ্যাকাডেমিয়া সিনিকা’র অধ্যাপক মাও-চ্যাং লিয়াং-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আইআইটি খড়্গপুরের প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই ঝড় (টাইফুন) গুলি তাইওয়ানে আসার সাথে সাথে, আমরা একটি উঁচু ভবনের উপরে একটি ভর স্পেকট্রোমিটার স্থাপন করেছি, যাতে বাষ্পে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের আইসোটোপগুলি ক্রমাগত পরিমাপ করা যায়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা দেখেছি, প্রতি দশ মিনিটে একটি ঝড়ের গতি প্রকৃতির মধ্যে কত পরিবর্তন হয়!” লিয়াং বলেন, “যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই ভারত এবং তাইওয়ান (বা, জাপান)-এর মতো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় অধ্যুষিত (গ্রীষ্মমন্ডলীয়) দেশে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে এই গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক গবেষণার আরো সুদূরপ্রসারী দিক উন্মুক্ত করবে।”