দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুন: চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মেদিনীপুর স্টেশনে একা একা বসে কাঁদছিলেন এক বৃদ্ধা। রেলপুলিশ তাঁকে উদ্ধার করার পর যোগাযোগ করে কোতোয়ালী থানার সাথে। কোতোয়ালী থানার উদ্যোগে এবং মেদিনীপুর পৌরসভার সহায়তায় বছর ৭০-র বৃদ্ধার ঠাঁই হয় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড স্থিত সেল্টার ফর আরবান হোমলেসে। ভাষাগত সমস্যার কারণে প্রথম প্রথম কেউই বুঝতে পারছিলেন না বৃদ্ধার নাম-ধাম। ধীরে ধীরে বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীরা বুঝতে পারেন বৃদ্ধার বাড়ি বিহারের ভাগলপুরে। নাম ফুলবতী দেবী। তবে, কোনভাবেই বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না! শনিবার (৭ জুন) মেদিনীপুর শহরের কয়েকজন সাংবাদিকের সহায়তায় বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব বা হ্যাম (HAM) রেডিও-র সাথে। তারপরই হয় মুশকিল আসান! মাত্র আধঘন্টার মধ্যেই হ্যাম রেডিও ক্লাবের তরফে খুঁজে বের করা হয় বৃদ্ধার ঠিকানা। যোগাযোগ করা হয় পরিবারের সদস্যদের সাথে। প্রিয়জনের খবর পেয়ে শনিবার রাতেই বিহারের ভাগলপুর থেকে মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যরা। রবিবার সকালে মেদিনীপুর শহরে পৌঁছন HAM রেডিওর দুই সদস্য সহ বৃদ্ধার স্বামী শনিচর মণ্ডল সহ দুই নাতি। মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান এবং পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে ফুলবতী দেবীকে তুলে দেওয়া হয় তাঁর স্বামীর হাতে। নতুন শাড়ি পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে বিদায় জানানো হয় ফুলবতী-কে।

thebengalpost.net
বিদায় বেলায় ফুলবতী দেবী:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

জানা গিয়েছে, বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা বছর ৭৮-র শনিচর মণ্ডল বর্ধমানের গুড়াপ স্টেশনে ঝাঁটপাট দেওয়ার কাজ করতেন। সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী-কে ডাক্তার দেখানোর জন্য বর্ধমানে এনেছিলেন। ডাক্তার দেখানোর পর এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন ধরার জন্য গুড়াপ স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এদিকে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে স্ত্রী-র হাতছাড়া হয়ে যায়। ফুলবতী উঠে যান ট্রেনে। প্ল্যাটফর্মে তাঁকে খুঁজতে থাকেন স্বামী শনিচর। এর মধ্যেই ছেড়ে দেয় ট্রেন! ১৭ এপ্রিল কোনও একটি ট্রেন ধরে মেদিনীপুর স্টেশনে পৌঁছে যান ফুলবতী দেবী। তারপর অবশেষে প্রায় দু’মাস পর মধুর মিলন!

thebengalpost.net
হ্যাম রেডিও ক্লাবের সদস্যদের সাথে:

রবিবার চোখের জলে মেদিনীপুর ছাড়েন ফুলবতী। স্ত্রী-কে ফিরে পেয়ে আনন্দাশ্রু শনিচরের চোখেও! মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, “এর থেকে ভালো ঘটনা আর কি হতে পারে! আমরা সকলেই খুব খুশি। মেদিনীপুরের আরবান হোমলেসের কর্মী পূজা রানা সহ সুদীপ্ত, শোভন, অভিষেক, দেবব্রত প্রমুখ সাংবাদিকদের এই উদ্যোগ সত্যিই অসাধারণ। হ্যাম রেডিও-কেও ধন্যবাদ জানাই।” রবিবার রাতেই স্ত্রী-কে নিয়ে বিহারের ভাগলপুরে পৌঁছে গিয়েছেন শনিচর। সোমবার ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও (হ্যাম রেডিও) ক্লাবের অন্যতম সদস্য নির্মলেন্দু মাহাত।

thebengalpost.net
মেদিনীপুরে সকলের সাথে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):