দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ জুন: “এর আগেও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে। তবে, ২ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয়নি। এবারই প্রথম ১৩ দিনের দীর্ঘ যুদ্ধ হল। ইজরায়েলের বাসিন্দারাও বলছিলেন গত ১৫ বছরে এমন যুদ্ধ দেখেননি। যদিও, প্রথম ৮-৯ দিন আমরা এতোটা ভয় পাইনি। সবথেকে আতঙ্কের দিন ছিল যুদ্ধের ১১ তম দিনটা (রবিবার, ২২ জুন)। সেদিন সকালে আমাদের আবাসনের খুব কাছেই একটা মিসাইল পড়েছিল। আমরা বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে যাওয়ার সময় দেখি, রাস্তায় ভাঙা কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমরা যেখানে কফি খেতে যেতাম, বাজার করতে যেতাম, সেই জায়গাগুলোও দেখলাম অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই প্রথম আমরা সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে যাই। যাইহোক সোমবারের (২৩ জুন) মধ্যেই ভারতীয় দূতাবাস আমাদের সরিয়ে নিয়ে যায়।….এই ক’দিনে প্রতি মুহূর্তে আমাদের সজাগ থাকতে হত। যেকোন মুহূর্তে অ্যালার্ম বাজতে পারে। যদি কেউ ঘুমিয়ে যায়। সেটাই হয়তো…!” বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বাড়ি ফিরে ঠিক এভাবেই ভাউদি হাইস্কুলে দাঁড়িয়ে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর ভাউদি গ্রামের যুবক অনিরুদ্ধ বেরা।

thebengalpost.net
বাবা-মা’র সাথে অনিরুদ্ধ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুলের তরফেও তাঁকে সংবর্ধিত করা হয়। ভাউদি হাই স্কুল থেকেই মাধ্যমিকের ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন অনিরুদ্ধ। ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার বায়োফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত সরকারের তৎপরতায় ‘অপারেশন সিন্ধু’-তে মঙ্গলবার (২৪ জুন) তিনি দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে কলকাতা হয়ে নিজের বাড়িতেও পৌঁছে গিয়েছেন। অনিরুদ্ধ জানান, “ইসরাইলে মিসাইল হানা বা যুদ্ধ কোন ব্যাপার নয়! কিন্তু, এবারের মত এত ভয়াবহ আকারের যুদ্ধ সে দেশের বাসিন্দারা দেখেননি। তবে, আমরা ভাবিনি যে এত দ্রুত সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বা যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হবে। আগামী দু’সপ্তাহ পরিস্থিতি দেখার পর পুনরায় ইজরায়েলের ফেরার চিন্তা-ভাবনা করব।” অনিরুদ্ধ এও জানান, “ইজরায়েলের বাসিন্দাদের যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরাও থাকতে থাকতে সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেলেছি। তাই এখানে বাবা-মা’র যতটা দুশ্চিন্তা হয়, আমার ততটা নয়। এই ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা দেখেছি, ইজরায়েলিরা বিচে (সৈকতে) ফুটবল খেলছেন, পার্টি করছেন!”

thebengalpost.net
নিজের স্কুলে অনিরুদ্ধ বেরা:

অনিরুদ্ধ’র সংযোজন, “ইজরায়েলের শক্তির উপর ভরসা আছে। আর সবেথেকে বড় কথা, আস্থা আছে ভারত সরকারের উপর। যদি আবারও কখনো এই ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি আসে, আমরা নিশ্চিত ভারত সরকার আবারও আমাদের নিরাপদে ফেরাবে।” এদিকে, একমাত্র ছেলে বাড়ি ফেরায় খুশি বাবা-মাও। বাবা অসীম কুমার বেরা বলেন, “ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে আমরা খুশি। ভারত সরকার এবং ইজরাইলে থাকা ভারতীয় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানাই।” মা রাখি বেরা বলেন, “খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে খুব খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।” পরিস্থিতি ঠিক হলে, তবেই ছেলেকে আবার পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

thebengalpost.net
ভাউদি হাইস্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে অনিরুদ্ধ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):