দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ জুলাই: “আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি/ যুগল প্রেমের স্রোতে/ অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে…আজি সেই চিরদিবসের প্রেম/ অবসান লভিয়াছে/ রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।” রবি ঠাকুরের ‘অনন্ত প্রেম’ কবিতার লাইন। তবে এই কবিতা যে নারায়ণগড়ের প্রত্যন্ত এক গ্রামের সহজ-সরল দিনমজুর সুনীল সিং কখনও পড়েননি, তা হলফ করে বলা যেতে পেরে। তবে বুধবার দুপুরে তিনি যা ঘটালেন, তাতে তাঁকে অনন্ত প্রেমের পূজারী বললে খুব একটা অত্যুক্তি করা হয়না! স্ত্রী-র মৃত্যুর ৩৬ ঘন্টার মধ্যেই নিজেকেও ‘শেষ’ করে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের রামপুরা গ্রামের বছর ৫১-র দিনমজুর সুনীল সিং। বুধবার বিকেল নাগাদ গ্রামের অদূরে শ্মশানের একটি গাছ থেকে সুনীলের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে ওই শ্মশানেই দাহ করা হয়েছিল সুনীলের স্ত্রী অঞ্জলি (৪৭)-কে!

thebengalpost.net
সেই শ্মশান, তখনও জ্বলছে অঞ্জলির চিতা:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

স্থানীয়রা জানান, সুনীল ও অঞ্জলির বছর ২৮-র একটি ছেলে আছে। তবে, ছেলে আর বউমার সাথে ইদানিং বনিবনা না হওয়ায়, বছর দুয়েক ধরে তাঁরা আলাদাই থাকছিলেন। দিনমজুরি করে দু’জনে টানাটানির মধ্যে সংসার চালিয়ে নিতেন বলে জানান সুনীলের ভাই গোরা সিং। তিনি এও জানান, গত কয়েক দিন ধরে তাঁর বৌদি অঞ্জলি লিভারের জন্ডিসে ভুগছিলেন। ডাক্তার দেখানোর পরেও কিছুতেই সুস্থ হচ্ছিলেন না অঞ্জলি। এনিয়ে ক’দিন ধরেই মনমরা ছিলেন সুনীল। শেষমেশ সোমবার রাতে অঞ্জলির মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সকালে গ্রামের অদূরে শ্মশানে তাঁকে দাহ করা হয়। বড্ড একা হয়ে যান সুনীল। গ্রামবাসীরা বলেন, স্ত্রী-কে চোখে হারাতেন সুনীল! তাই ভাই গোরা কিংবা গ্রামের যুবক দুর্গা সিংরা সুনীলকে চোখে চোখেই রেখেছিলেন মঙ্গলবার সকাল থেকে। এর মধ্যেই, বুধবার দুপুরে প্রায় গোটা পাড়া যখন শুনশান, সেই সময়ই কখন সুযোগ বুঝে শ্মশানে পৌঁছে যান সুনীল। স্ত্রী-র চিতার উল্টোদিকেই থাকা একটি গাছের ডালের সঙ্গে গামছার ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন! এদিকে, জমি থেকে ফিরে গোরা শোনেন, দাদাকে (সুনীলকে) দুপুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক সেই সময়ই ওই শ্মশানে গ্রামের এক বৃদ্ধকে দাহ করতে গিয়ে সুনীলের ঝুলন্ত দেহ লক্ষ্য করেন গ্রামবাসীরা। তাঁরাই গোরাকে খবর দিলে ছুটে যান তিনি এবং পাড়ার অন্যান্য লোকজন। সকলেই স্তম্ভিত হয়ে যান! গোরা, দুর্গা সহ সকলেই একবাক্যে বলে ওঠেন, “স্ত্রী-কে ছেড়ে থাকতে পারল না!” এই বিষয়ে সুনীলের ছেলে-বউমার কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও, মকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রণব বিজলি বলেন, “বিকেলের দিকেই এমন একটি ঘটনার কথা শুনলাম! সত্যিই এখনও যে এমন প্রেমের অস্তিত্ব আছে, তাও আবার নেহাতই খেটেখাওয়া এক পরিবারে; ভাবলেই শিউরে উঠছি।” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “মৃতদের উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে।”